ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
লিভার বা যকৃতের কোষের ক্ষয় সাধন,লিভার সিরোসিস আঁতকে ওঠার মতো একটি রোগের নাম। সিরোসিস শুনলেই যেন মনে আসে আরেকটি ভয়াবহ রোগের নাম লিভার ক্যান্সার। সিরোসিস আর ক্যান্সার সাধারণ মানুষের কাছে একে অপরের সমার্থক। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু ঠিক তা নয়। রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে লিভার সিরোসিসকে লিভার ক্যান্সারের সাথে তুলনা করে।
★ সিরোসিস কি?
সিরোসিস লিভারের একটি ক্রনিক রোগ যাতে লিভারের সাধারণ গঠন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লিভার হারায় তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। তবে এসব কোন কিছুই হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের মতো সহসা ঘটে না। সিরোসিসের রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোন রকম রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। ঠিক একইভাবে সিরোসিসের কারণে লিভারে সামান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা সমস্যাটি হতে পারে অনেক বড়। রোগের লক্ষণ আর কষ্টগুলো দেখা দেয় ডিকম্পেনসেটেড বা অ্যাডভান্সড সিরোসিসের কারণে যখন লিভারে বড় ধরনের গোলযোগ দেখা দেয়।
★সিরোসিসের লক্ষণ:
সিরোসিসের লক্ষণ নানা রকম হয় এবং নিচের বর্ণনার যেকোনো সংমিশ্রণে হতে পারে।
- হেপাটোমেগালি : সিরোসিসের প্রথম দিকে লিভার বড় হয়, কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে ততই লিভারের কোষগুলো ধ্বংস হয়ে ফাইব্রোস টিস্যু দ্বারা পূরণ হওয়ায় লিভারের সাইজ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।
- জন্ডিস : জন্ডিস সিরোসিসের জন্য অপরিহার্য নয়। এটি নির্ভর করে লিভার কতটা কর্মক্ষম আছে তার ওপর। তাই জন্ডিস থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
- এসাইটিস : লিভারের কোষের স্থলে ফাইব্রোস টিস্যু হলে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায়, ফলে পেটে পানি জমে। জন্ডিস ও পেটের পানি লিভারের গুরুতর অবস্থা নির্দেশ করে এবং সিরোসিসের শেষ দিকে দেখা যায়।
- স্পাইডার টেলানজিসিটাসিয়া : বুকের উপর রক্তনালীর জাল দেখা যায়।
*যৌন ইচ্ছা কমে যায়, বুকের লোম পড়ে যায়, পুরুষের স্তন বৃদ্ধি, অন্ডকোষ শুকিয়ে যায়, যৌন অক্ষমতা ইত্যাদি হতে পারে। - রক্তক্ষরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
আগেই যেমনটি বলেছি, কম্পেনসেটেড সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অনেক সময় রোগীরা শারীরিক দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, পেটের ডান পাশে ব্যথা, জ্বর-জ্বর ভাব, ঘন-ঘন পেট খারাপ হওয়া ও পাতলা পায়খানা ইত্যাদি সমস্যা অনুভব করতে পারেন। অ্যাডভান্সড সিরোসিস চিত্রটি কিন্তু একদম বদলে যায়। এ সময় পায়ে-পেটে পানি আসে, জন্ডিস হয় এবং রোগী অনেক সময় অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। রক্তবমি ও পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি আসা, কিডনি ফেইলিউর, শরীরের যে কোন জায়গা থেকে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আর সিরোসিস ব্যক্তির শীরের সিরোসিস সব চেয়ে আতঙ্কের ও ভয়াবহের তা পরবর্তিতে লিভারে ক্যান্সারে আক্রমণ করতে পরে।
★সিরোসিস কেন হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় ব্যক্ত করা যাবে না, অঞ্চল, এলাকা ও দেশভেদে সিরোসিসের অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে। ইউরোপ ও আমেরিকার সিরোসিসের প্রধান কারণ অ্যালকোহল আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। আমরা বাংলাদেশে অনেক রোগীর উপর পর্যবেক্ষণ ও জরিপ করে দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের দেশে লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এর পরের ধাপেই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ও অ্যালকোহলের স্থান বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের অনেক পরে। ফ্যাটি লিভার নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্যে পরিচালিত গবেষণা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়ে দেখা যায় ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। আমাদের দেশেও আমরা ফ্যাটি লিভারজনিত কারণে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের রোগী আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসে। অতএব সকলকে সাবধানতা অবলম্ব করতে হবে এবং যথাসময় হোমিও চিকিৎসা নিলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
★সিরোসিস হলে কি করবেনঃ
সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যক্তির উচিত দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেয়া এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করা। যথা সময়ে চিকিৎসা নিলে দ্রুত আরোগ্য হয়ে সুস্থ জীবন করা যায় ও দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। পাশাপাশি সিরোসিসের কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করলে লিভার খারাপের দিকে যাওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়। লিভার সিরোসিস ও এর কারণগুলোর আধুনিক চিকিৎসা আজ আমাদের দেশেই হোমিওপ্যাথিতে সম্ভব। এদেশে যা নেই তা হলো লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা। বিভিন্ন দেশে এ সুযোগ থাকলেও তা খুব ব্যয়বহুল আর সঙ্গত কারণেই আমাদের দেশের সিংহভাগ রোগীর সাধ্যের বাইরে। তবে আশার কথা এই যে, এদেশে লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে সুন্দর ও সফল ভাবে হবে।
হোমিও প্রতিবিধানঃ
রোগ নয় রোগিকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য সঠিক লক্ষণ নির্বাচন করে প্রাথমিক অবস্থায় লিভার সিরোসিসের রোগিকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাতে সম্ভব।
লেখক,
সম্পাদক ও প্রকাশক,দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা,
হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পাদক,সবুজ আন্দোলন কার্যনির্বাহী পরিষদ
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply