আবির শাহিনঃ
সারা বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লকডাউন চলছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও চলছে সেই লকডাউন। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লকডাউন আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে দেশটিতে। দীর্ঘ ২১ দিনের লকডাউনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আটকা পড়েছে অনেক মানুষ।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনের ঘরের বাইরে যাওয়ারবিষয়টি কঠোর হাতে দমন করেছে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
কিন্তু এরই মধ্যে একটি ঘটনা সারা ভারত থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছে। লকডাউনের কারণে সন্তান ‘বিপদে’ আছে জেনে মা নিজের সন্তানকে উদ্ধার করে আনতে পাড়ি দিয়েছে
১৪শ’ কিলোমিটার পথ।
টানা তিন দিন স্কুটি চালিয়ে ১৪শ’ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক পেরিয়ে আরেক অঙ্গ রাজ্যে আটকে পড়া ছেলেকে উদ্ধার করে গোটা বিশ্ববাসীর কাছে খবরের শিরোনাম হয়েছেন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের এক মা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নিজের আটকে পড়া সন্তানকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য থেকে গত সোমবার যাত্রা শুরু করেন মা রাজিয়া বেগম (৪৮)।
উদ্দেশ্য যেকোনো ভাবে পার্শ্ববর্তী রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশে আটকে পড়া ছেলেকে বাড়ি নিয়ে ফেরা।এজন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে
১৪শ’ কিলোমিটার পথ!
আর তা সফলভাবে শেষে করে গত বুধবার ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন মা রাজিয়া বেগম।
এ বিষয়ে মা রাজিয়া বেগম গণমাধ্যমকে বলেন,দুইচাকার যান স্কুটি চালিয়ে এতো রাস্তা পাড়ি দেওয়া একজন নারীর পক্ষে ছিল খুবই কঠিন কাজ। তবে ছেলেকে ঘরে আনার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আমার সব ভয়কে তুচ্ছ করে দিয়েছে।
যাত্রা পথে আমি এমন সময় পর্যন্ত পার করেছি যখন দেখেছি রাতের আঁধারে কোথাও কেউ নেই। চারিদিকে শুধু সুনসান নীরবতা।
ব্যক্তিগত জীবনে,রাজিয়া বেগম হায়দ্রাবাদ থেকে দুইশ’ কিলোমিটার দূরে নিজামাবাদ সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ১৫ বছর আগে তিনি তার স্বামী হারান। তার দুই সন্তানের একজন প্রকৌশলী গ্রাজুয়েট, অন্যজন ১৯ বছর বয়সী নাজিমুদ্দিন। যার কিনা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন।
বন্ধুকে রেখে আসতে গত ১২ মার্চ নাজিমুদ্দিন তেলেঙ্গানার নিলোরের রাহামাতাবাদে গেলে এরইমধ্যে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণায় তিনি সেখানে আটকা পড়েন।
আর নিজের ছোট ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের ভয়ে বড় ছেলেকে পাঠাননি রাজিয়া বেগম। সেখানে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে পরিকল্পনায় প্রথমে গাড়ির কথা ভাবলেও পরে তা বাদ দিয়ে দুই চাকার স্কুটিতেই ভরসা খুঁজে নেন এই সাহসী মা।
সেই দুঃসাহসী কাজটি করে
অবশেষে স্কুটি চালিয়েই ভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে সফল হন দৃঢ় প্রত্যয়ী এই প্রমিলা নারী।
সূত্র: কলকাতা২৪, নিউজ১৮ বাংলা, হিন্দুস্তান টাইমস
You cannot copy content of this page