মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ
‘বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢাক, এলোরে পহেলা বৈশাখ।’ বৈশাখের আগমন ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু বাজছেনা ঢোল ঢাক। ঋতুরাজ বসন্তকে বিদায় জানিয়ে আগমন ঘটে বৈশাখের। বাঙালি জাতির মহা উৎসব এটি। সারা দেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এ দিনটি উৎসবে আমেজে পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানে বসে বাহারি রঙের মেলা। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সব আয়োজন বন্ধ করে দিয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দরে পান্তা-ইলিশ খাওয়া, মুড়ি-মুড়কি, মন্ডা-মিঠাই সবই হয়েছে। তবে তা যার যার ঘরে। সীমিত করা হয়েছে মানুষের চলাচল। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্য সময় পহেলা বৈশাখের আগে যে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে তা এবার অনুপস্থিত। দোকানপাট বন্ধ বলে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য হালখাতার আয়োজন নেই। বৈশাখী কেনাকাটাও নেই। নেই পান্তা-ইলিশ আয়োজনের তোড়জোড়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও এর বাইরে নয়। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের প্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাই সব আয়োজন বন্ধ। ‘মুক্ত করো ভয়, আপন মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্যে সরকারী নির্দেশনায় বৈশাখ পালন হচ্ছে ডিজিটাল ভাবে। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এভাবেই পালন করছে। ক্ষুদে বার্তা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোয় জানাচ্ছে বর্ষবরণের শুভেচ্ছা।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনায় তাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপে ভার্চুয়াল পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়েছে। এতে বাংলা সংস্কৃতির ভাবধারা ধারণ করে শিক্ষার্থীদের নাচ, গান, আবৃত্তি, বাঁশির সুরসহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে বৈচিত্রপূর্ণ উপস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে দিচ্ছে আবেগঘন স্ট্যাটাস। দিচ্ছে গত বছর বা এর আগে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ছবি। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আর কোন পহেলা বৈশাখ পালন করতে পারবেনা। কারণ আগামী চার বছর রমজানের ছুটি পড়বে বৈশাখের দিনে।
আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই বৈশাখই ছিল আমার শেষ বৈশাখ। গত বছরও এই দিনটি কাটিয়েছিলাম বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে উৎসবে আমেজে।’
চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এটিই ছিল প্রথম বর্ষবরণ উৎসব। এই দিনটিকে ঘিরে ছিল অনেক পরিকল্পনা। ভাবতেই কষ্ট লাগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আর হয়তো বর্ষবরণ পাবোনা।’
আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবসান বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙ্গালির ঐতিহ্যবাহী দিন পহেলা বৈশাখ জাকজমকপূর্ন ভাবে উদযাপন করবে। এই সুযোগ পেয়েছিলাম গত বছর। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন বন্ধু, স্যার, ম্যাম, বড় ভাই-বোনদের নিয়ে অনেক মজা করে কাটিয়েছি। কিন্তু এবার তা পারছিনা। ইচ্ছার বিরুদ্ধেও আজ গৃহবন্দি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিবছর সাড়ম্বরে পহেলা বৈশাখ পালন করি। করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে।’
Leave a Reply