জুবায়েল হোসেন, সিরাজগঞ্জ থেকেঃ
অসময়ে ভাঙ্গছে যমুনা নদী। করোনা ভাইরাসের সাথে নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুরের যমুনা পাড়ের মানুষ। নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে সিরাজগঞ্জে এনায়েতপুর থানার খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের মানুষ।
গত তিনদিন ধরে যমুনা নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের জন্য নদী পাড়ের মানুষ গুলো ঘর থেকে এমনিতেই বের হতে পারছে না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, তাঁত কারখানা বন্ধ। এর পর নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
করোনা ভাইরাসের সাথে নদী ভাঙ্গনে তাদের কষ্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানো চেষ্টা করছে।
বৈশাখ মাস সবেমাত্র শুরু। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও যমুনা নদীতে জোয়ার শুরু হয়নি। বর্ষা মৌসুম আসতে এখনও তিনমাস বাকি। এ অবস্থায় যমুনা নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। করোনা ভাইরাসের চেয়ে নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক এখন তাদের বেশি।
যমুনা তীরবর্তী পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কয়েক বছর ধরে ভাঙ্গনের কবলে আছে। বাড়ি ঘর ফসলি জমি হারিয়েছে খুকনী, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নে ব্রক্ষানগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা, জালালপুর, হাটপাচিল, ঘাটাবাড়ি গ্রামের মানুষ।
গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে গ্রামগুলো। করোনা ভাইরাসের সাথে নদী ভাঙ্গনে তাদের কষ্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
স্থানীয় আকবর আলী বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গন নিয়ে আতঙ্কে আছি। নদীতে বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। এলাকার মানুষ বিপদগ্রস্ত। আমরা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছি না। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের সাথে নদী ভাঙ্গন দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনা পাড়ের মানুষ।
আব্দুল মমিন বলেন, সমস্যা অনেক। এক দিকে নদী ভাঙ্গন অন্য দিনে করোনা ভাইরাস। সরকার বলছে ঘরে থাকতে। কিন্তু আমাদের তো ঘরই না। নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঘরে থাকবো কিভাবে। খাদ্য সহায়তা নাই। কষ্টে দিন কাটছে। এরমধ্যে একটু স্বস্তির খবর হলো নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হয়েছে।
জাললপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাসের একদিকে মহামারি অরেক দিকে নদী ভাঙ্গনে ভয়াল থাবা। এই দুটো মিলে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। প্রত্যেকটি মানুষই অনাহারে অধ্যহারে দিন কাটাচ্ছে। কারন বর্তমানে তাদের কর্মনাই। সবাই এখন বেকার। এজন্য খাদ্য সহায়তার চাহিদা বেশি। আমরা প্রথমে রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, দিন মুজুর তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। কোন লোকই না খেয়ে থাকবে না। পর্যায়ক্রমে আমরা সবার ঘরে খাদ্য পৌছে দেব।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন ঠেকাতে বালির বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হচ্ছে। এনায়েতপুর থেকে হাট পাচিল পর্যন্ত বালির বস্তা দিয়ে নদীর পাড় ঢেকে দেয়া হবে। বর্ষা মৌসুমে যেন নদী না ভাঙ্গে এজন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী ভাঙ্গন রোধে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি পাশ হলেই আমরা কাজ শুরু করবো।
Leave a Reply