সুজন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি ঃ অন্য কোন উপায় ছিলোনা তাই সেহরিতে ত্রানের চালের পঁচা ভাত খেয়েই রোযা রেখেছি। যা শতভাগ অস্বাস্থ্যকর। এই প্রতিবেদকের কাছে ত্রানের নিম্ন মানের চালের রান্না করা ভাত হাতে নিয়ে অশ্রুভেজা চোখে এমনিটি জানাচ্ছিলেন একজন ত্রাণ গ্রহীতা নারী। এ ধরনের অভিযোগ শুধু এক জনের নয় বরং ত্রাণ গ্রহিতা শতাধিক মানুষের।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, আমরা এর আগে কোন ত্রান সহযোগিতা পাইনি। স্থানীয় ভাবে আমাদের এই প্রথম সহযোগিতা করা হলো। তাও নিম্ন মানের চাল দিয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা এমনিতে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তার উপরে এমন চাল পরিস্থিতি কখনই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও দ্রুত সমাধানের দাবি করছি।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল রবিবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১১ নং মোহম্মদপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বানিয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে গঠিত ত্রান তহবিল থেকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘরবন্দী ৩৬২ জন কর্মহীন পরিবারের মাঝে ত্রান বিতরণ করা হয়। এ ত্রানের অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি পরিবার কে ৪ কেজি ৮ শ গ্রাম করে চাল বিতরণ করা হয়। সেই ত্রানের চাল ভাত খাওয়ার অনুপযোগী ও নিম্নমানের হওয়ায় আজ সোমবার সকালে বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করে স্থানীয় ত্রান গ্রহিতারা। তারা ত্রানের চাল নিয়ে রাস্তায় ব্যাগ সহ ফেলে রেখে প্রতিবাদ করতে থাকে। সে সময় সেখানে এক উত্তেজনাময় পরিস্থিতি বিরাজ করলে সদর থানা পুলিশ ঘটনা স্থলে আসে। এ সময় স্থানীয়দের মাঝে হাতাহারিও ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় সোয়াদ কোরাইশী সেই সাথে অন্যান্য স্থানয়িরা সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয়দের উদ্যোগে ত্রান তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলে ৬৬ হাজার টাকা জমা হয়। সে থেকে ১৮শ ৫০ টাকা বস্তা দরে (৫০ কেজি ওজনের বস্তা) মোট ৩৫ টি বস্তা ডিও মোস্তফার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। এর মধ্যে কিছু চাল নিম্ন মানের অভিযোগ এনে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছে। আমি বলেছি চাল ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পুনারায় চাল দেওয়া হবে।
এ চাল মোস্তফা কামাল নামের ওই ব্যক্তির কাছে ক্রয় করা হয়েছে কিনা জানার জন্য তার মুঠোফোনে কল করা হলে তার মুঠোফোন রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে ১১ নং মোহম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: সোহাগ বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইউনিয়নের ঘরবন্দী গরীব কর্মহীন মানুষদের মাঝে খাবার পৌঁছে দিতেই আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ত্রান তহবিল গঠন করি।তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যকে প্রধান করে ১১ জন সদস্য বিশিষ্ট ত্রান ত্রান তহবিল কমিটি গঠন করা হয় এবং তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তহবিল সংগ্রহ ও ত্রান বিতরণের জন্য।
এরই অংশ হিসেবে ত্রান বিতরণ শুরু করি গতকাল রবিবার থেকে। ত্রান বিতরনে নিম্ন মানের চাল দেওয়া হয়েছে রান্না করার পর অনেকে আমাকে মুঠোফোনে অভিযোগ করেছে। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো বলি সেসব মানুষদের।
তবে গতকাল নিম্নমানের চাল বিতরণের অভিযোগ করাতে অমি অত্যন্ত মর্মাহত। আজ রবিবার সকালে এখানকার স্থানয়ীরা আন্দোলন করছে শুনে আমি ঘটনা স্থলে আসি এবং যারা ত্রান সহযোগিতা পেয়েছে তাদরে প্রত্যেকের খবর নিতে বলি সংশ্লিষ্ট কমিটিকে। সেই সাথে যাদের সমস্যা আছে তাদের চাল ফেরৎ নিয়ে ভালো চাল দেওয়ার জন্য বলেছি। কোন মানুষ যাতে হয়রানির স্বীকার না হয় সে বিষয়ে আমি সবাইকে যথেষ্ট সচেতনতার সাথে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। অন্যথায় আমি ত্রান তহবিল কমিটির সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, চাল ক্রয়ের সময় ওই ওয়ার্ডের ত্রান তহবিল কমিটি আমার সাথে সমন্বয় না করে চাল ক্রয় করেছে। আমি জানতাম না কি ধরনের চাল তারা ক্রয় করেছে। তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
Leave a Reply