কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃতখন বেশ রাত। গ্রামের ভিতরে ছিমছাম ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ। ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকে। ঠিক সেই সময় খাবারের গাড়ি নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটছে স্কুল শিক্ষক মোমতাজ উদ্দীন। অভুক্তদের জন্য গাড়ি ভর্তি খাবার। নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিচ্ছেন অসহায় কর্মহীন মানুষের ঘরে। গভীর রাতে নিজের ঘরের সামনে খাবার পেয়ে খুশি অনাহারীরা। এমন চিত্র গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নে।
স্টিলের একটি আলমারীতে সাজানো খাদ্যসামগ্রী। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে খাবার নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। আবার সামর্থ অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী কিনে রেখে যাচ্ছেন অনেকে। এমন ব্যতিক্রম কাজের নাম দেওয়া হয়েছে ’মানবতার ঘর’। এরই মাঝে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি মানবতার ঘরের কাজ। তারা এখন একটি অটোরিকশায় খাবার ভর্তি করে পৌঁছে দিচ্ছে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে।
৭ এপ্রিল উপজেলার টোক ইউনিয়নের নয়ন বাজারে অনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয় মানবতার ঘর। লকডাউনের কারণে ২৪ এপ্রিল থেকে ভ্রাম্যমাণ ভাবে কর্মহীনদের ঘরে খাবার দিচ্ছে তারা।
সারাদেশ যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আতঙ্কিত। ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ খাদ্য সংকটে। মধ্যবিত্তরা লজ্জায় সহযোগিতা নিতে পারে না। সমাজের সবার কথা বিবেচনা করে এই ব্যতিক্রম উদ্যোগটি নিয়েছেন বীর উজলী দিঘীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমতাজ উদ্দীন।
’মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই স্লেগানকে সঙ্গে নিয়ে সমাজের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়াসে শুরু করা মানবতার ঘর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ অসচ্ছল পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেয়াজ, ছোলা, মুড়িসহ নয় প্রকার শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক মোমতাজ উদ্দীন বলেন, সমাজের অনেক মানুষ আছে খাদ্যাভাব থাকলেও কারও কাছে হাত পাততে পারে না। মানবতার ঘর স্থাপন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা।
তিনি আরো বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। একটু সহানুভূতির অনুদান, বাঁচতে পারে হাজারে ক্ষুধার্ত প্রাণ। বিভিন্ন স্তরের মানুষ মানবতার ঘরের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনার এ সংকটকালীন সময়ে এমন উদ্যোগ দেশব্যাপী নেওয়া প্রয়োজন।
শামীম শিকদার
কাপাসিয়া, গাজীপুর
০১৭৯৯৩৮৯০৫০
You cannot copy content of this page