করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট সংকটে প্রতিবন্ধীদের উপকারের জন্য মায়ের গহনা বিক্রির ১৫ হাজার ৩শ’ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে দান করেছেন রাহুল বিশ্বাস নামে প্রতিবন্ধী এক কিশোর। তিনি কিশোরগঞ্জের সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থী।
সোমবার (৪ মে) দুপুরের দিকে কিশোরগঞ্জের ডিসির বাংলোয় উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর হাতে প্রতিবন্ধী রাহুল বিশ্বাস অনুদানের নগদ টাকা হস্তান্তর করে। এ সময় প্রতিবন্ধী রাহুল বিশ্বাসের সঙ্গে তার মা শোধা রাণী বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধী রাহুল বিশ্বাস উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে তাদের একটি সংস্থা রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে এ সংস্থার উদ্যোগে সাবান, মাস্ক, সচেতনতামূলক লিফলেট ও জীবাণুনাশক স্প্রে করার কাজ তারা চালিয়ে গেছেন।
এছাড়াও অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নিজের পরিচালিত ছোট একটি ওষুধের দোকান থেকে প্রায় ১৭ হাজার টাকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করে অর্থ সংকটে পড়েন।
পরে তিনি তার মায়ের কাছে টাকা চান। তার মা গহনা বিক্রি করে ১৯ হাজার টাকা দিলে মায়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি ১৫ হাজার ৩শ’ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
জেলার করিমগঞ্জের গুজাদিয়ার খয়রতহাটি গ্রামের রাহুল বিশ্বাস আরও জানান, মায়ের ইচ্ছা পূরণ ও দেশের প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্য এ অনুদানের টাকা ব্যয় হবে, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। সারাজীবন প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
নগদ টাকা গ্রহণকালে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার ও মাছমা আক্তার, জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী এ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিকসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টাকা গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এই প্রতিবন্ধী যুবককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এই স্কুলছাত্রটি আজ যা করল তা আমাদের সকলের জন্যই মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফার্মেসি দোকানের ব্যবসা করা এই প্রতিবন্ধী ছেলেটি নিজের বিবেকের তাড়নায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যার্থে মায়ের কাছে আবদার করে টাকা দেওয়ার জন্য।
মা টাকার সংস্থান করতে না পেরে অনন্যোপায় হয়ে নিজের গলার চেন বিক্রির টাকা তার সন্তানের হাতে তুলে দেন। এ এক অবিস্মরণীয় বিষয়। আমি সমাজের বিত্তবানদেরও আহবান জানাব এই সংকট মুহুর্তে সকলকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসতে।’
এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, ইতোমধ্যে এই সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলটি সরকারি এফিলিয়েশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, এই টাকা আজ সোমবারের (৪ মে) মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বরাবরে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
You cannot copy content of this page