ভরত রায় প্রত্যয়, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম পূর্ববর্তী। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সময় অধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন জাতীয় নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার দেশে প্রথম বারের মত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ প্রণয়ন করে যার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত নারী সমাজের ভাগ্যান্নয়ন করা।
পরবর্তীতে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট সরকার উক্ত নীতিতে পরিবর্তন ঘটায় ও নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৪ প্রণয়ন করে।
২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংশোধিত আকারে প্রণীত হয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮, কিন্তু তা কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮এ নারীর ক্ষমতায়ন, সম অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতি পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেন।
নারী যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষশাষিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোড়ামী সামাজিক কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে তাকে রাখা হয়েছে অবদমিত। গৃহস্থালি কাজে ব্যয়িত নারীর মেধা ও শ্রমকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি।
নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আন্দোলন জানিয়ে বলেছিলেন ” তোমাদের কন্যাগুলোকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, নিজেরাই নিজেদের খাদ্যের সংস্থান করুক”। তার এই আহ্বানে নারী অধিকার আদায়ের পন্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। উনবিংশ শতকের শেষভাগে এদেশে নারী জাগরণে সাড়া পরেছিল শুধু শিক্ষা গ্রহণ কে কেন্দ্র করে। এছাড়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এ অংশগ্রহণ করে নারী তাঁর অধিকার আদায়ে সচেতন হয়ে ওঠে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও উন্নয়নের গণ অভ্যুত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তারই ধারাবাহিকতায় চিরিরবন্দর উপজেলার কৃতি সন্তান ও চিরিরবন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু “বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ফোরাম” এর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের “আঞ্চলিক প্রধান প্রতিনিধি” নির্বাচিত হওয়ায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন উপজেলার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “পাশে দাঁড়াও”।
উল্লেখ্য যে ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পরেই,১২নভেম্বর ১৯৯৬ সালে নারীদের সহায়তায় অর্থ পত্র প্রদান করেন।
যা নারী উন্নয়ন ফোরাম এ রূপান্তরিত হয়। এই ফোরাম নারী জনপ্রতিনিধি কর্তৃক পরিচালিত একটি সংগঠন। যার পরিধি দেশব্যাপী বিস্তৃত।
“নারী উন্নয়ন ফোরামকে শিল্প-বাণিজ্য কাজে যুক্তকরণ প্রকল্প” চলমান। যা বাস্তবায়নে জেলা কো-অডিনেটর বিদ্যমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সভাপতি, নারী উন্নয়ন ফোরাম কর্তৃক দেশব্যাপী “আঞ্চলিক কো-অডিনেটর ” “জেলা কো-অর্ডিনেটর” “উপজেলা কো-অর্ডিনেটর” এবং “সিটি-পৌর ও ইউপি কো-অর্ডিনেটর”।
১৯৭১সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অসামান্য অবদান রাখে। জাতীয় উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ আবশ্যক। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয় এই উন্নয়ন পরিকল্পনা। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নারী সংগঠনগুলোও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে।
এসময় একান্ত আলাপচারীতায় বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ফোরাম” এর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের “আঞ্চলিক প্রধান প্রতিনিধি লায়লা বানু বলেন, নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, সমাজকল্যাণ মূলক, আর্থিক সাবলম্বিতা অর্জনের জন্য প্রথম বারের মতো আমি নারী উন্নয়ন বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। ১৯৭১ সালে যে সব মা-বোনেরা পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর অত্যাচারের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
Leave a Reply