মেহেদী হাসান উজ্জ্বল,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাসের অতংঙ্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠদানে প্রযুক্তিই একমাত্র ভরসা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী গ্রীনল্যান্ড মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পাঠদান করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সারা দেশে গত ১৭ মার্চ থেকে পর্যায় ক্রমে ৩০মে পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানের ব্যতিক্রমধর্মি উদ্যোগ নিয়েছে গ্রীনল্যান্ড মডেল স্কুল। গতকাল শনিবার সকালে বিদ্যালয় কক্ষে প্রথমদিনে ৮ম ও ১০ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে দুটি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে এই পাঠদান শুরু করা হয়েছে। বিদ্যালয় কতৃপক্ষ জানান,ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে না এসেই একটি এপছ্ এর মাধ্যমে মোবাইলে ভিডিও কলে বাড়ীতে বসেই ক্লাশ করতে পারবে। এবং স্কুলের নিজস্ব পেইজের মাধ্যমে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ পড়াশুনায় মনোযোগ রাখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস এই পদ্ধতিতে নেয়ার প্রস্ততি চলছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয় চত্বর ফাকা থাকলেও বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষে মোবাইল হাতে ব্যাস্ত রয়েছেন স্ব-স্ব শ্রেনী শিক্ষক। ভিডিও কলে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে পাঠদান করছে শিক্ষকবৃন্দ। এমনকি স্কুলের পরিচালকসহ শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিচ্ছেন ভিডিও কলের মাধ্যমে। সাথে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শুধু ভিডিও কলেই নয়, লেখাপড়ার বিভিন্ন বিষয়ে গ্রীন ল্যান্ড মডেল স্কুল নামে ফেইসবুক পেইজে আপলোড করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধাজনক সময়ে দেখে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে সমাজের সচেতন মহল ও সাধারণ জনগন সাধুবাদ পোষণ করেছে। শুধু গ্রীন ল্যান্ড স্কুল নয়, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। তাদের ফেসবুক পেজে এসেছে নানা ধরণের মন্তব্য।
ওই স্কুলের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রীর বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন,এটি সৃজনশীল এবং মহতী উদ্যোগ এর মাধ্যমে বাচ্চারা পড়াশোনায় সচল থাকবে। শিক্ষার্থীদের আরও এক অভিভাবক সাহেদ আলী বলেন, আমার মেয়ে সাফিয়া বিনতে আলী ১০ম শ্রেনিতে পড়ে, সে ক্লাস টিচারের সাথে ভিডিও কলে ক্লাস করেছে, সে খুব খুশি। অভিভাবক এন্তাজ আলী বলেন, আমার ছেলে আজ ভিডিও কলে ক্লাস করেছে, এই ব্যতিক্রম ক্লাস পেয়ে সে অনেক উৎচ্ছাসিত এবং আমরাও অনেক খুশি হয়েছি। বাচ্চারা ঘরে বসে থাকলে লেখাপড়া বাদদিয়ে টিভিদেখাসহ কার্টুন এর উপর নির্ভর হয়ে পড়বে। তাই স্কুলের এই উদ্যোগে কার্টুন দেখা থেকে শিশুরা বিরত থাকবে। পরবর্তীতে তাদের স্কুলে যেতে অনিহা থাকবে না।
এ বিষয়ে গ্রীন ল্যান্ড মডেল স্কুল এর নির্বাহী পরিচালক মোকারম হোসেন বিদুৎ বলেন,করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায়রাখতে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। স্কুল বন্ধ রয়েছে শিশুরা ঘরে বসে থাকলে অনেকটাই অমনোযোগি হয়ে পরবে এব সেইসাথে চর্চা না থাকলে অনেক কিছু ভুলে যাবে। তাই আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছি। এতে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। বেশ কিছুদিন ধরে স্কুল বন্ধের পর অভিভাবকরা তাদের বাচ্চার লেখা পড়া নিয়ে হতাশায় পরে যায়। আমাদের এই উদ্যোগে গ্রহনের পর তাদের হতাশা অনেকটাই দুর হয়েছে । তিনি আরও বলেন, এখন আধুনিক যুগ, এ্যান্ড্রয়েট ফোন ও ইন্টারনেট সবাই ব্যবহার করেন। তাই আমরা এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছি। শুধু মুখে বললেই হবে না ডিজিটাল বাংলাদেশ। নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকে কাজে লাগাতে হবে তবেই দেশের উন্নতি।
গ্রীনল্যান্ড মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন- শিক্ষকরা স্কুলের পাশাপাশি বাসায় বসেও প্রযুক্তিতে ক্লাস নিতে পারবে ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে। শুধু অফিস সময়েই নয়, বিভিন্ন সময়ে আমরা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বাচ্চাদের পড়ালেখার তথ্য দিয়ে থাকবো। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারাও যেন ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগায়। এতে বর্তমান সময়ে বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তার সাথে স্কুল বন্ধের প্রভাব পরবে না শিক্ষার্থীদের মাঝে।
You cannot copy content of this page