প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ১৫, ২০২৫, ৪:২৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৯, ২০২০, ১০:৪০ অপরাহ্ণ
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বসুন্ধরা কোভিড-১৯ আইসোলেশন হাসপাতাল। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলো দেশের বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই করোনা হাসপাতাল।
রোববার (১৭ মে) দুপুরে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের উপস্থিতিতে হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপ এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, সুষ্ঠুভাবে হাসপাতালটি তৈরি করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে এটিকে হাসপাতাল করার আমাদের যে উদ্যোগ সেটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন, এজন্য তাকেও ধন্যবাদ জানাই। এটা যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় এজন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।
এসময় সবাইকে সবার পাশে থেকে দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, যে যেভাবে পারুন বাংলাদেশকে সাহায্য করুন। আমরা যেন করোনামুক্ত থাকতে পারি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বসুন্ধরার এই আইসোলেশন হাসপাতালের দুই হাজারের বেশি বেডের মাধ্যমে এখন আমাদের কাছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আইসোলেশন বেড প্রস্তুত আছে। এছাড়া অন্য করোনা হাসপাতাল মিলিয়ে শুধু ঢাকাতেই এখন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বেড প্রস্তুত।
জাতীর এই ক্রান্তি কালে বসুন্ধরা করোনা হাসপাতালটি বাস্তবায়ন করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা, যুবলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিস এর ভাইস চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট পররাষ্ট্রনীতি গবেষক ড. সাজ্জাদ হায়দার বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আর্মি হেড কোয়ার্টার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে দিন রাত পরিশ্রম করে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে সহযোগিতা দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ২১০০ বেডের বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করেন। ড. সাজ্জাদ হায়দার বলেন করোনার কারনে জাতীর এই দুঃসময়ে জনগণের জন্য কাজ করতে পেরে বসুন্ধরা গ্রুপ এবং আমি নিজে গর্ববোধ করছি এবং পাশাপাশি আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা এবং মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
করোনা মোকাবিলায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) সরকারকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের স্বনামধন্য একটি গ্রুপ। বাসস্থান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ওনারা কাজ করেন। দেশের মানুষদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে আসছেন। তারা করোনা মোকাবিলায় এভাবে এগিয়ে আসার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
‘এই হাসপাতালের জন্য ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে ৫শ’ রোগীর জন্য, দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫শ’ রোগীর জন্য এবং সবশেষে বাকি রোগীদের জন্য এই তিন ধাপে এখানে লোকবল পদায়ন করা হবে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে পুরা অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. সাজ্জাদ হায়দার। পাশাপাশি তিনি এই হাসপাতাল স্থাপন করার ব্যাপারে বসুন্ধরার পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন এবং কেন এই হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে তাহা তিনি ব্যাখ্যা করেন।
এসময় ড. সাজ্জাদ হায়দার বলেন, করোনা মহামারির এই সময়ে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের অনেক হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। এই ধরনের রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নানা ধরনের অবহেলার শিকার হচ্ছে। তাই এই ধরনের রোগীদের সেবা দিতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরাগ্রুপ এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস ও মিডিয়া উপদেষ্টা মোঃ আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং বিভাগের ডিজি আয়েশা সিদ্দিকা, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চীপ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওসমান ফারুক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: আমিনুল হাসান প্রমুখ।
এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন এবং বসুন্ধরা কভিড হাসপাতালের পরিচালক ডা. তানভীর আহমেদ চৌধুরী সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃন্দ।
উল্লেখ্য,
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম থেকেই দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর অংশ হিসেবে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল তৈরিতে স্থাপনা দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে এ শিল্প গ্রুপ।
এছাড়া করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ১০ কোটি টাকার চেকও হস্তান্তর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
এর আগে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরকে এক হাজার পিপিই ও ৫০ হাজার মাস্ক, ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগকে ২৫ হাজার মাস্ক, নৌবাহিনীকে ৫০ হাজার মাস্ক, ৫০০ পিপিই ও দুই ট্রাক (৭০০ প্যাকেট) খাদ্যসামগ্রী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) ৫০ হাজার মাস্ক ও চার ট্রাক খাদ্যসামগ্রী এবং ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) ৫০ হাজার মাস্ক, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ২৫ হাজার মাস্ক ও তিন হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে রাজধানীর দুস্থ ও নিম্ন আয়ের কয়েক হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ইফতার করানো হচ্ছে পুলিশসহ কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষকে।