‘বাজান বাড়ি আসবিনা?’ না আম্মা এই ঈদে বাড়ি আসা হইব না,তুমি মন খারাপ কইরো না আম্মা।
এই ঈদের নিত্য কথোপকথন হয়ে উঠেছে উপরের লাইন দুটি যেখানে ঈদ মানেই নারীর টানে বাড়ি ফেরা।প্রতি ঈদেই টিভির পর্দায় একটা গান চোখে পড়ে “এইত সময় ফিরে আসার,স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার”! কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অভাবনীয়।
ঈদ মানে উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই পরিবারের সাথে কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত।কিন্তু বর্তমানে দেশের করোনার ভয়াবহতায় পরিস্থিতি সম্পুর্ন ভিন্ন।
প্রতিটা ঈদেই সবার ঘরে ফেরার তাড়া থাকে, তবে এবার সেখানে ভিন্নতা। অনেকেই দু’মাস আগে গ্রামে এক সপ্তাহের জন্যে বেড়াতে গিয়ে আটকে গেছে এবং অবস্থান করছে সেখানেই।কেউবা পেটের দায়ে,চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকাতেই দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে ছিল পুরোটা সময়। হয়ত আশা ছিল ঈদে কিছু টাকা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরে ঈদ করবে আপজনদের সাথে। কিন্তু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার দরুন বেড়েছে লকডাউনের সময় বন্ধ সকল প্রকার দূর পাল্লার বাস,ট্রেন ও লঞ্চ! আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে, অনেকেই মানছেনা স্বাভাবিক লকডাউন। তাই প্রসাশনের আদেশে আগামী ২১-২৭ মে পর্যন্ত লকডাউনের কঠোরতা আরো বাড়বে। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রসাশনের কড়া নির্দেশ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ উদযাপনের। এই ঈদে আর রেল স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডে ঘন্টার পর ঘন্টা টিকেটের জন্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবেনা,দেখা যাবেনা লঞ্চের ছাদে বাবার হাতে ছোট্ট মেয়ের পরম নির্ভরতার হাত! অনেকেই পরিবার ছাড়াই একা ঈদ করবে ঢাকাতে।
১০ তারিখ থেকে শপিং মলগুলো সীমিত পরিসরে খুলে দিলেও অনেকেই সামিল হচ্ছেনা ঈদের কেনাকাটায়। চাল-ডাল,মাছ-সব্জিই যেখানে অনেকের ৩ বেলা নিয়ম করে মুখে জুটছেনা সেখানে ঈদের কেনাকাটা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না।অনেকেই আবার শপিং এর টাকায় সাহায্য করছে গরিব-দুস্থদের।
গত কয়েক দশকের তুলনায় এবার খুব ভিন্নতর ঈদ পার করতে যাচ্ছি আমরা । কারো হয় তো ঈদ কাটবে বেশ ভালোভাবে আবার করো বিষাদময় । গদবাধা নিয়মে সকালে নামাজ বিকেলে প্রিয়জনের সাথে একটু ভিন্ন সময় পার করা এবার হয়ত আর চোখে পড়বেনা। আসলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আনন্দের চেয়ে বেদনা, কাতরতা আর আক্ষেপ ই বেশি থাকবে।তবে অনেকেই হয়ত মেনে নিয়েছি এই চরম ভয়াবহতার পরিণাম।
শুধু বাংলাদেশে না বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। এই পরিস্থিতি কে কি নামে আখ্যায়িত করা উচিত আমার জানা নেই। নিরব এক ঘাতকের সাথে আমাদের লড়াই হচ্ছে,না দেখেই আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা লড়াই করে যাচ্ছি বেঁচে থাকার আশায়।পুরো বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের ভয়ে ভীত,ঘর বন্দী!প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় আমরা যাতে শেষ না হয়ে যাই তাই নিতে হবে কঠোর সতর্কতার পদক্ষেপ পাশাপাশি হতে হবে সচেতন।বেলা শেষে সবাই যেন বিজয়ের হাসি হাসতে পারি সেই আশাতেই সবার অহেতুক বেঁচে থাকা!
লেখকঃ শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ
Leave a Reply