বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়েছে।
সোমবার (২৫ মে) সকাল ১১টায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর,বাঁশরী, জাসাস এবং বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ নিবেদন করা হয়েছে। এর আগে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।
কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
সকালে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনার মহামারিতে আক্রান্ত। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র পাঁচ জন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর মমতা ও ভালোবাসা থেকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আজ কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী, এইদিনে তাকে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
এর আগে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম ও কর্মে। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। নজরুলের ক্ষুরধার লেখনী যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তার বাণী ও সুরের অমিয় ঝরনাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। “বিদ্রোহী” কবিতায় কবির বলিষ্ঠ উচ্চারণ, “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।
নজরুলকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। নজরুল জাতি-ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসের প্রতীক। তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তার সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক। কবি নজরুলের সাহিত্য ও সঙ্গীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির দীক্ষাস্বরূপ।
Leave a Reply