ফারজানা চৌধুরী পাপড়িঃ
‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নিয়ামত লাভ করার আনন্দ।মুসলমানদের জন্য ঈদের চাঁদ অত্যন্ত আনন্দের মহূর্ত। কারণ চাঁদের হিসাবেই ঈদ পর্ব শুরু হয়। রমজান মাসের শেষ দিন মুসলমান মাত্রই হোক সে বৃদ্ধ, যুবক কিংবা শিশু, চাঁদ দেখা বা চাঁদের খবর নিতে উৎসুক দেখা যায়। আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঈদের চাঁদ দেখার জন্য উৎসুক থাকতেন।তবে এবারের ঈদে চাঁদ দেখতে হয়নি।আগ থেকেই জেনে নিয়েছিলাম কোন দিন ঈদ হবে।প্রাকৃতিক নিয়মেই রোজা শেষে পালন করলাম ঈদুল ফিতর। তবে এবার ঈদের সেই চিরচেনা আনন্দের রূপে ঘাটতি দেখা দিল আমার মাঝে।করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট এবং অনিশ্চয়তায় অপরিচিত এক ঈদ উদযাপন করতে হল।করোনার কারণে ম্লান হয়ে গেল এবারের ঈদের আনন্দ।সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় ঈদের দিনে প্রতিবেশী,বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা, ঘুরে বেড়ানো কিছুই হলনা।ফলে ঈদে চিরাচরিত সেই আনন্দের আবহ ছিলনা। ঘরে বসে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতিবেশী,বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সাথে দূরে থেকে ঈদ উদযাপন করলাম। ঈদের সার্বজনীন চরিত্র হারানোর এ অভিজ্ঞতা আমার কাছে আমাদের সবার কাছে নতুন। ভয় অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল।সমাজের অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল, শ্রমিক শ্রেণি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন থেকে উপার্জনহীন। গার্মেন্টসকর্মী, কর্মহীন শ্রমিক, দিন মজুরসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বোবা কান্নার চিত্র এবারের ঈদের আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেল।বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেতন-বোনাস পাননি এবারের ঈদে। ঈদের পরে অবস্থা কি হবে, সেই আতঙ্কে ছিলেন অনেকেই। একদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক, অন্যদিকে জীবিকার অনিশ্চয়তা এবারের ঈদে বেশিরভাগ মানুষের ভাবনার বিষয় ছিল। তাই চাইলেও ঈদে আনন্দ করাটা কষ্টকর ছিল। করোনাকালে নানামুখী অনিশ্চয়তা-সংশয়, দুঃখ-কষ্ট, বেদনা সবকিছু মিলে এবারের ঈদের আনন্দ অনেকটাই কষ্ঠের ও বেদনাদায়ক ছিল। তবে তারপরেও আমরা মানুষ আশাবাদী।আশা করি একদিন অদৃশ্য শত্রু করোনাকে মোকাবিলা করে আবারও ফিরে আসবে সুদিন, মানুষ ফিরবে তার জীবন-জীবিকায়।একদিন আমরা পরিবার,প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবার সাথে সেই আগের মত আনন্দে মেতে উঠব।
Leave a Reply