ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি
রণেশ ঠাকুর দিরাইয়ের প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের অন্যতম শিষ্য। ১৭ মে মধ্যরাতে দিরাইয়ের উজানধল গ্রামে তাঁর গানের আসরের ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় বাউল রণেশ ঠাকুরের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে ‘বাউল সংহতি’ ব্যানারে বাদ্যবিহীন প্রতিবাদী গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গতকাল শনিবার রাত আটটায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। লাইভ এই আয়োজনে অন্য অনেক শিল্পীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে গান গাইতে আসেন জলের গান’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহুল আনন্দ। সলিডারিটি কনসার্ট ফর রণেশ ঠাকুর’ শীর্ষক পরিবেশনার শুরুতেই রাহুল আনন্দ আক্ষেপ করে বলেন,,আমি কোনো প্রতিবাদ করবো না, আমি কোনো বিচার চাইবো ন। আগুনটা তো শুধুমাত্র রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে দেওয়া হয়নি; সে আগুনের আঁচ আমার ঘরেও এসেছে, এমনকি আপনার ঘরেও পড়েছে। কেন বাউলের ঘরে আগুন? বাউল তো সাম্যের কথা বলে, বাউল সুন্দরের কথা বলে,। সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর নিজের গান শুরু করেন রাহুল আনন্দ। ‘মুনিয়া জানেরে তোর মনেরেই বেদন,ওই তন্ত্রমন্ত্রে পাই না তোরে, আমার ঘরে কে দিলো আগুন’- এমন কথায় গানটি পরিবেশনের সময় রাহুলের প্রতিবাদী কর্মকাণ্ড নজর কাড়ে সবার।গান গাওয়ার সময় নিজের পুরো মুখ কালি দিয়ে ঢেকে দেন রাহুল আনন্দ। রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন দেওয়ার মাধ্যমে শিল্পী ও শিল্পের প্রতি যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে মুখে কালি মেখে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান তিনি। এসময় নিজের গান ও ছবি আঁকার খাতা ছিঁড়েও প্রতিবাদ জানান রাহুল আনন্দ। তবে ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সকল দর্শকদের আবেগতাড়িত করে তুলেন রাহুল আনন্দ। পরবর্তীতে এ অনুষ্ঠানে যারা গান গাইতে আসেন তাদেরও ছুঁয়ে যায় রাহুলের এই প্রতিবাদ।টানা আড়াই ঘণ্টা এ অনুষ্ঠান চলে বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন দিয়ে বাউলের বাদ্যযন্ত্র আর ৪০ বছরের গানের সংগ্রহশালা নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মাধ্যমে শিল্পী ও শিল্পের যে অবমাননা হয়েছে, তারই প্রতিবাদ জানান রাহুল আনন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আয়োজনের সমন্বয়ক উজ্জ্বল দাশ। প্রথমেই গান পরিবেশনায় অংশ নেন বাউল রণেশ ঠাকুর। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও কনক আদিত্য, বাউল শফি মণ্ডল, বশিরউদ্দিন সরকার ও সূর্যলাল দাস, সৈয়দ হাসান টিপু, পিন্টু ঘোষ, আশিক, শিবু কুমার শীল ও প্রকাশ, কলকাতার শিল্পী দেব চৌধুরী ও রাজীব দাশ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তাজুল ইসলাম, লন্ডন প্রবাসী অমিত দে, গৌরী চৌধুরী ও সোহিনী আলম, জার্মানি প্রবাসী শবনম সুরিতা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পারমিতা দে প্রমুখ অংশ নেন।
Leave a Reply