কথা রেখেছে করোনা। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দয়া মায়াহীনভাবেই বাংলাদেশেও তান্ডব চালাচ্ছে। দেশ আক্রান্ত, মানুষ অসহায়, আতংকিত। আতংকটা এতটাই ভয়াবহ যে নিজের জন্মদাত্রী মা'কে ও জঙ্গলে ফেলতেও পিছ বা হচ্ছে না নিজ সন্তান। করোনা নিয়ে সরকারে সব মহল থেকে সবাই যখন যুদ্ধ করছে, তখন নিজে থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে মানুষের পাশে দাড়াবে বলে। তারই অংশ হিসেবে জেকেজি হেলথ কেয়ারের বুথ বসে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে।
শুরু থেকে তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অন লাইন ও অফ লাইনে প্রশংসায় ভাসিয়ে তিতুমীরিয়ানরা। যেভাবেই হোক নিজের ক্যাম্পাসের পবিত্র মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে করোনা যুদ্ধে। এটুকুই যেনো তাদের অনেক পাওয়া। শুধু শিক্ষার্থী বা শিক্ষকরাই নয়। করোনা যুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তিতুমীর কলেজের কর্মচারীরাও। নিজেদের কোনো স্বার্থ না থাকলেও নিজেরাই কাঁধে করে বাঁশসহ সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেয়। নিজেদের সামর্থের সবটুকু দিয়েই সাহায্য করে।
অথচ করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ কাজ করতে এসে আমাদের সম্মুখ যোদ্ধাদের কাজগুলো দেখেন:
- প্রথম থেকে ক্যাম্পাসের কর্মচারীদের নিজেদের চাকর ভাবতে শুরু করে।
- রমজান মাসে উচ্চ গান বাজনা ও নাচানাচি। যার ফলাফল এলাকাবাসিসহ সবার অভিযোগ। পরে অধ্যক্ষসহ সকলে চেষ্টায় মীমাংসা।
- যেহেতু ক্যাম্পাস ফাঁকা, তাই ১৫০ জনের মত ছেলে মেয়ের নিরাপত্তার বিষয় থাকে। তাই রাতের বেলা মেয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের নিরাপত্তাকর্মীরা ছেলেদের বাসস্থানে যাওয়াসহ বের হওয়ায় আপত্তি করে।
- অথচ আপত্তি উপেক্ষা করে গাউছিয়া মসজিদের আশে পাশে এলাকাবাসির হাতে মধ্যরাতে ছেলেমেয়েসহ আটক। যা পরে অধ্যক্ষসহ তাদের কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয়।
- লক ডাউন থাকা অবস্থায় সরকার মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়। যার কারণে ক্যাম্পাসের মসজিদের নামায পড়তে তাদের নিষেধ করা হয়। এটি নিয়েও মসজিদ কতৃপক্ষের সাথে তর্কাতকি।
- সরকারি কলেজের পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেমন হয় সবারই জানা। একটু পান থেকে চুন খসলেই কলেজের কর্মচারীদের সাথে যা তা ব্যবহার।
- করোনা নমুনা সংগ্রহের উপাদানগুলো যথানিয়মে না ফেলে, ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে ফেলে রাখা। প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় ক্ষমতার দাপট।
- সর্বশেষ রাত ১ টার সময় নাইট ড্রেস পড়া মেয়ে ছেলেদের থাকার স্থানে যেতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাঁধা দেয়। সেখানে তাদের হুমকি দিয়ে সেই মেয়েকে ছেলেদের বাসস্থানে নিয়ে যায়। পরে কর্মচারীরা গিয়ে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় পেলে পুলিশে খবর দেয়। আর এখান থেকেই মারামারির সূত্রপাত।
- মারামারির সম্ভবত দুপক্ষই করে। ১৫০ জন মিলে ২০-২৫ জন কর্মচারীকে তিন দফা হামলা করে। তাদের বাসায় ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর করে স্ত্রী ও সন্তানদেরও লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে তারা মসজিদের ইমামের বাসায় আশ্রয় নিলে সেখানেও চলে নির্মমতা।
- মনের স্বাধমত পেটানোর পর তারা সূক্ষ চিন্তা নিয়ে চলে আসে রাস্তায়। কলেজ গেট লাগিয়ে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং মিডিয়ার সামনে একপক্ষীয় মিথ্যাচার করে। আর করোনার সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে তারা তিনটি টিভি চ্যানেলে একপক্ষীয় নিউজ করাতেও সক্ষম হয়।
- অন্যদিকে কলেজের কর্মচারীরা না বুঝে মিডিয়া, না বুঝে আন্দোলন। মার খেয়ে তারা তখন অধ্যক্ষকে ফোন করে যায়। আর আরেকদফা মার খাওয়া থেকে বাঁচতে ক্যাম্পাসে লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। তখন মিডিয়ার সামনে না আসতে পারার কারণেই কয়েকটি নিউজে তাদের দোষারোপ করা হয়। সাথে করোনার সহাভূতিটাও কাজ করে।
- রাতের ঘটনার পর কি হলো জানতে, দিনের বেলা কলেজের পরিস্থিতি জানতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা অধ্যক্ষসহ সবার মতামত নেয়। এরপর জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মীদের মতামত নিতে গেলেই নিজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরাও হামলার স্বীকার হয়।
এখন কথা হচ্ছে,
- করোনার এই মূহুর্তে মহৎ কাজ করতে এসে নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবা কতটা যুক্তি যুক্ত?
- মেডিকেল কাজ করতে এসে হাত কাটার... সহ মারামারি সরঞ্জাম তারা কোথায় পেলো মধ্য রাতে?
- বুঝলাম কর্মচারীদের হয়তো দোষ আছে (যদিও আমি এখনো পাইনি)। তাহলে কলেজ প্রশাসন আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আছে। কিন্তু আইন হাতে তোলার অধিকার তাদের কে দিলো? সাংবাদিকদেরসহ নারী হেনস্থা করার শিক্ষা তারা কোথায় পেলো?
এর উত্তর হয়তো তারাই ভালো দিতে পারবে।
শেষে শুধু এতটুকুই বলবো। দেশের বর্তমান পেক্ষাপটে চর্তুথ শ্রেনীর কর্মচারীদের বেতন ভাতা কতটুকু তা আমরা সবাই জানি। তাদের লাইফ স্টাইলই বা কেমন তাও আমরা জানি। এই অসহায় মানুষগুলো যদি কোনো অন্যায় করেও থাকে এভাবে পশুর মত মেরে মিডিয়া গেম খেলে আপনারা সহানুভূতি পেলেও, নিজের বিবেকের কাছে হয়তো কখনোই সহানুভূতি পাবেন না।
প্রতিটা শিক্ষার্থীর কাছেই তার প্রতিষ্ঠান পবিত্র ভূমি। আর আপনারা সেই পবিত্র ভূমিই রক্তাক্ত করেছে তাদের প্রিয় মামাদের রক্তে। তাই আপাদত মিথ্যাচার বন্ধ করে সোজাপথে আসেন।
আর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এবং এই ঘটনার সাথে দোষী যেই হোক কর্মচারি বা স্বেচ্ছাসেবক তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। ক্যাম্পাসের মামাদের রক্তাক্ত করার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোর সহযোগিতা কামনা করছি।
সকাল থেকে অনেকেই ক্যাম্পাসে কি ঘটছে জানতে চেয়েছেন। তাই ঘটনার বিবরণর যতটুকু জেনেছি নিরপেক্ষভাবে লেখা। সিদ্ধান্ত আপনার গালিটা কাদের দিবেন, করোনা সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে যারা মিথ্যাচার, নোংরামি ও সন্ত্রাস করেছে তাদের নাকি তিতুমীর কলেজের কর্মচারিদের।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, সরকারি তিতুমীর কলেজ
[লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]
You cannot copy content of this page