নিজস্ব প্রতিবেদক-
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার দ্বাদশপট্টি গ্রামবাসির উদ্যোগে প্রায় ৩শ মিটার গ্রামীন সড়কে মাটি ভরাট করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে দেখা যায়, দ্বাদশপট্টি সড়কে গর্ত ভরাটের কাজ চলছে। সেখানে বালু দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সড়কের দু’পাশে পাইলিং সহ শ্রমিকদের পাশাপাশি গ্রামের সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
জানা যায়, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম দ্বাদশপট্টি। গ্রামের পাশেই বহু তাঁত কারখানা ও বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আড়কান্দি, জালালপুর, পাকুরতলা ও চৌহালী পাড়ার কয়েক হাজার মানুষ দ্বাদশপট্টি গ্রামের এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে। সড়কের দু’পাশে বাড়ি গুলো উচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই হাটু পানি জমে কাঁদায় একাকার হয়ে ডোবায় পরিনত হতো। এতে শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সহ পথচারীদের চলাচলে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণে গত এক সপ্তাহ আগে দ্বাদশপট্টি মোড় মসজিদ চত্বরে একটি আলোচনা সভা হয়।
এ সময় এনায়েতপুর থানার স্থল ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্মসম্পাদক এনামুল হক জিন্নাহ, জালালপুর ইউনিয়ন আ’লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আলতাফ মন্ডল, স্থানীয় ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ফরিদ খাঁন, থানা যুবলীগের সদস্য আশরাফ আলী বেপারী, দলের নেতা ও দ্বাদশপট্টি জলাশয়ের দলপতি রেজাউল করিম, স্থানীয় মুরুব্বী রশওন আলী মোল্লা ও এনায়েতপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক রফিক মোল্লা সহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিল।
সভায় উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে এলাকার উন্নয়ন ও জনদুর্ভোগ লাগবে দ্বাদশপট্টি সড়কে মাটি ভরাট ও উন্নয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। পরে এলাকার দিনমুজুর, ভ্যান চালাক, নৌকার মাঝি, তাঁত শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক সহ গ্রামবাসি সেচ্ছায় টাকা দিয়ে বালু ভরাট কাজে অংশ নেন। এ সময় গ্রামের নারী পুরুষ, ছোট-বড় সবাই সড়কের কাজে নেমে পড়ে। এছাড়া আশপাশের গ্রামের কিছু লোকজনও সেচ্ছাশ্রমে সড়ক নির্মানে এগিয়ে আশে।
গ্রামের লোকজন জানান, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়ন ছাড়াও চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের বহু মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে দ্বাদশপট্টি গ্রামে বসবাস করে আসছে। এছাড়া যমুনা পাড়ের ৪-৫টি গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। বিশেষ করে থানা সদর ও আড়কান্দি কবরস্থানে যাতায়াতেও এ সড়কটি ব্যবহৃত হয়। পাশেই মালিপাড়া ও বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই রাস্তার দুরবস্থায় বর্ষায় বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। গ্রামের ব্যবসায়ীরা মালামাল নেওয়ার জন্য ভ্যান বা অন্য যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন না। গ্রামের কৃষিজীবী সমেশ আলী বলেন, ওই রাস্তার পূর্বপাড়ে বিশাল ফসলি মাঠ। সেখান থেকে গরুর গাড়ি কিংবা ভ্যানতে দুরের কথা বর্ষা মৌসুমে পায়ে হেঁটেও চলা যায় না। তাই কৃষকদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। এদিকে নজর নেই কারোর।
এ বিষয়ে এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য রইচ উদ্দিন জানান, দ্বাদশপট্টি গ্রামটি শাহজাদপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় কয়েক যুগ ধরে অবহেলিত রয়েছে। তবে এলাকাবাসির উদ্যোগে সড়কটি উচু ও প্রশস্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাগব হয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ী আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, ওয়াবদাবাঁধের পুর্ব পাশের গ্রাম গুলো বরাবরই উন্নয়ন বঞ্চিত। দ্বাদশপট্টি খালে একটি বিজ্র অথবা পূর্বপাড়ে আড়কান্দি কবরস্থান থেকে দ্বাদশপট্টি মোড় পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা নির্মানের দাবি জানাই। এদিকে সড়ক নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা আ’লীগ নেতা এনামুল হক জিন্নাহ ও সাংবাদিক রফিক মোল্লা জানান, মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রাস্তা নির্মান কাজে টাকা দিয়েছে। সড়কটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। মাটি ফেলায় কিছুটা হলেও যাতায়াতে দুর্ভোগ কমেছে। তবে সরকারী ভাবে একটি প্রকল্প দিয়ে সড়কটি প্রশস্ত ও পাকা করনের দাবি জানাই।
সড়কটি পরিদর্শন করে পরিবেশ ও সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস, এনায়েতপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মুক্তার হাসান ও একুশে টিভির সংবাদ উপস্থাপক ওয়াহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, গ্রামবাসি উদ্যোগ নিয়ে যে মহৎ কাজটি করেছে এটা সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সবাই যদি এগিয়ে আসে কোন ভাল কাজ থেমে থাকে না এটাই তার উদাহারন। এ বিষয়ে জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, এলাকাবাসির উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তারা মহৎ একটি কাজ করেছে, যে কাজ করার কথা ছিল জনপ্রতিনিধিদের। ভবিষ্যতে রাস্তাটি প্রসস্তকরণ ও পাকাকরণের ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে
You cannot copy content of this page