বাংলার সব ঘরেই পুত্র সন্তান হলে নাম রাখা হয় খোকা। দিনে দিনে বড় হয় খোকা, পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। তার চোখ জুড়িয়ে যায় মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর,সোনালি ধারেন ক্ষেত্র দেখে দেখে। সময়ের সাথে সাথে খোকা বড় হয় যত, তত তার বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে। ক্লাসের বন্ধুদের বাইরে ও গ্রামের অনেক ছেলেদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ হয়। প্রায় বন্ধুদের বাড়ি থেকে এসে বলে, ” মা ওদের খেতে দাও, আমার বন্ধু গোপালের বাড়িতে আজ রান্না কিছুই হয়নি ” মা আনন্দের সাথে ছেলের বন্ধুদের খেতে দিত। মা হাসি মুকে ছেলের আবদার পূরণ করেন।
বর্ষাকালে স্কুলে যেতে সমস্যা হয় বলে বাবা খোকাকে ছাতা কিনে দিলেন। খোকা ছাতা নিয়ে স্কুলে যায়। একদিন ছাতা ছাড়া ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরল খোকা।
মা প্রশ্ন করলেন – ” তোর ছাতা কই বাবা? এমন ভিজছিস কেন?
খোক হাসি মুখে বলল – ” মাগো, আমার এক গরিব বন্ধুর ছাতা নেই। আমার ছাতা ওকে দিয়েছি ”
মা ছেলের এমন উদারতায় মুগ্ধ হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভালোই করেছিস বাবা
তোর বাবাকে বলব, তোকে আরেকটা ছাতা কিনে দিতে। মা ছেলের কপালে চুমু খেলেন।
গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি গোপালগন্জের মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এই সময়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগন্জ মিশন স্কুলের এক সংবর্ধনা সভা শেষে ফিরে যাচ্ছিলেন, পথরোধ করে দাঁড়ালেন শেখ মুজির।
স্কুলের ছাত্রাবাস জরাজীর্ণ, মেরামতের জন্য অর্থ চাই। শেরে বাংলা কিশোর মুজিবের সাহস ও স্পষ্ট বক্তব্য আর জনহিতৈষী মনোভাবের পরিচয় দেখে অবাক হন। তারপর প্রশ্ন করলেন, ছাত্রাবাস মেরামত করতে কত টাকা দরকার? স্পষ্ট কন্ঠে কিশোর বললেন – বারোশ টাকা। শেরে বাংলা ফজলুল হক সাথে সাথে টাকার ব্যবস্থা করলেন, বাল্যকাল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান একটু অন্যরকম ছিলেন। একবার নিজের বাড়ির গোলার ধান গ্রামের গরিব চাষীদের মাঝে বিলেয়ে দেন। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন -” এবার চাষীদের জমির ধান সব বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে, অভাবে পড়েছে কৃষক, আমাদের মতো ওদের পেটে ও ক্ষুধা আছে, ওরা আমাদের মতো বাঁচতে চায় ” বাবা ছেলের এই সৎসাহস ও মহানুভব দেখে বেশ খুশি হলেন। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান গরিবের বন্ধু আর নিপীড়িত মানুষের হৃদয় জয় করেন।
১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধ পর্যন্ত যত সংগ্রাম আন্দোলন হয় শেখ মুজিব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাকে নেতৃত্ব দেন, এই জন্য বহুবার কারাগারে থেকেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। তার নেতৃত্বই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তিনি যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করেন সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরুণের জন্য। তিনি আমাদের জাতির জনক।
তাই তো শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন ওনার সংগীতজীবনের সেরা সংযোজন করেছেন —
” যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা”
মো: সোলেমান হোসেন
একাউন্টিং এন্ড ইনফমেশন সিস্টেমস বিভাগ
সেশন – ২০১৮-১৯ (১৪তম ব্যাচ)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply