জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেক্ষিতে হাজার বছরের নিপীড়িত বাঙ্গালী ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরিসমাপ্তি হিসাবে বাঙ্গালী পায় চির প্রত্যাশিত স্বাধীনতা। শুরু হয় জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু “ক্যারিশমাটিক” নেতৃত্ব ও দক্ষতায় দেশকে নিয়ে যান অসীম উচ্চতায়। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সৃষ্টি করতে থাকেন আগামীর পরাক্রমশীল শক্তি হিসাবে। পিতা মুজিবের স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশকে পাচ্যর সুইজারল্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবার। যদিও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে কাজটা মোটেই সহজ ছিলো না। তবুও পিতা মুজিবের জনকল্যাণকামী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। হঠাৎ নেমে আসে আঁধারের কালো ছায়া। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনককে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা৷ স্বভাবতই তাঁরা দেশে এসে হাল ধরবেন এমনটা হবার কথা কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে দেশের মাটিতে পা অব্দি ফেলতে পারেন নি। পাশাপাশি, সুকৌশলে তখন ধ্বংস করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত চেতনা, হত্যা করা হয়েছে গণহারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের করা হয়েছে পুরস্কৃত, অবৈধভাবে তৈরা করা হয়েছে “ইনডেমনিটি ” নামক কালো আইন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ তখন পরিচিতি পায় কলঙ্কিত সাম্রাজ্য হিসাবে। যার নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা ছিলো পাকিপন্থী স্বৈরশাসকদের। সব শুরুর যেমন শেষ থাকে ঠিক সেভাবেই হঠাৎ থেমে গিয়েছিল অবৈধ স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু। জয় হয়েছিল জনগণের, জয় হয়েছিল সত্যিকারের জননেত্রীর। অবশেষে, নজরুলের ভাষায় চিরবিস্ময় বিদ্রোহী বেশে স্বৈরাচার, অগণতান্ত্রিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে জনগণের স্বপক্ষে বাংলার বুকে ফিরে আসেন জনগনের জননেত্রী। দিনটি ছিল ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে। হাজারো জনতার ভালোবাসায় সেদিন সিক্ত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দিনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিলে জনগনের ক্ষমতায়ন দিবস হিসাবে স্বীকৃত। ধীরে ধীরে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক স্বাভাবিকতায় সংঘবদ্ধ করতে থাকেন দেশের জনগনকে। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ৩ টি সংসদীয় আসন হতে নির্বাচিত হন। বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাখেন অগ্রনী ভূমিকা। যার ফলশ্রুতিতে দেশ থেকে সামরিক আইন একপ্রকার প্রত্যাখিত হয়ে সূচনা হয় সংসদীয় গণতন্ত্রের। শুরু হয় নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে।পতন ঘটে স্বৈরাচার এরশাদের। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ৯৬ এর ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। দেশরত্নের নেতৃত্বে গণ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উন্থান ঘটে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। জনগনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা, মুজিব হত্যার প্রায় ২ দশক পরে দেশে আবারো সূচনা হয় জনকল্যাণকামী গণতান্ত্রিক সুস্থ রাজনীতির। ২০০১ সালের প্রহসন মূলক নির্বাচনে হেরে গেলেও বরাবরই জনগনের আকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছেন জননেত্রী। আন্দোলন, সংগ্রাম বা জনগনের স্বার্থে রাজপথে সামনের সারিতে শেখ হাসিনা নেমে এসেছেন বারবার পিতা মুজিবের ন্যায় মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে। তাঁর জীবনের ঝুঁকিও ছিল সর্বাধিক। ২৯ বার নানা কূটকৌশলে দেশদ্রোহী নানা অপশক্তি তাঁকে হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল তথা অগণতান্ত্রিক সাম্রাজ্যতে রূপান্তরের চেষ্টা করে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট। স্রষ্টার অকৃপণ আর্শীবাদ ও জনগনের (কর্মীদের) মানবঢালে বেঁচে যান জনগনের জননেত্রী। দেহরক্ষী মাহাবুব নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেন বাঙ্গালীর আশা ভরসার একমাত্র বাতিঘরকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার দূরদর্শী পথচলার দ্বিতীয় পরিক্রমার হয় সূচনা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করার প্রয়াসে দেশরত্ন বিচারের মুখোমুখি করান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশদ্রোহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী এবং ৭৫ এর আত্ন-স্বীকৃত ঘাতকদের। একের পর এক যুগান্তকারী রায় ও রায়ের দ্রুত বাস্তবায়নে দেশে ফিরে আসে কলঙ্ক মোচনের সুবাতাস, শান্তি পায় ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ ৭৬ হাজার নিপীড়িত মা-বোনের বিদায়ী অতৃপ্ত আত্না। দেশকে শুধু কলঙ্ক মুক্তি দিয়েই ক্ষান্ত হননি শেখ হাসিনা বরং দূরদর্শী তথা ডায়নামিক নেতৃত্বে নিয়ে গেছেন অসীম উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, গবেষণা সহ প্রায় প্রতিটি খাতে দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়েছেন কয়েক ধাপ। বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার হার, দূর হয়েছে নিরক্ষরতা। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও বাড়ানো হয়েছে। যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাল মিলিয়ে ছিলো সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ । বছরের শুরুতে নিশ্চিত করা হয়েছে কোমলমতি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামুল্যে বই এবং শতভাগ উপবৃত্তির ব্যবস্থা। নতুন বইয়ের সুমিষ্ট গন্ধে তাই যেকোন শ্রেণী পেশার মানুষের ঘরে জন্ম নেয়া শিশুরা পায় শিক্ষার অালো গ্রহনের অবারিত সুযোগ। তাঁরা স্বপ্ন দেখে দেশকে এগিয়ে নেবার। পাশাপাশি সারাদেশে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৃদ্ধি করা হয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা। সফলতার মুখ দেখেছে পদ্মা সেতুর মতো নানা বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। যা একদিকে দেশকে করেছে সমৃদ্ধ অন্যদিকে সৃষ্টি করেছে লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। এখন আর মি.হেনরি কিসিঞ্জারের উত্তরসূরীরা বলতে পারে না বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। কেননা, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল- মিলিয়ে আমরাও গিয়েছে এগিয়ে। পোশাক শিল্প রপ্তানি, আইটি সেক্টর, নিজস্ব স্যাটেলাইট এমনকি নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ চিরবিস্ময়। তাইতো সাজিয়ে গুছিয়ে বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, বাংলাদেশ অাজ পা রেখেছে উন্নয়নের মহাসড়কে, পৌঁছে গেছে অসীম দিগন্তহীন মহাকাশে। যার নেপথ্যে কারিগর জনগনের জন্য নিরলসভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। যার দিনের শুরু হয় দেশকে নিয়ে ভেবে, শেষ হয় দেশের জন্য ভালো কিছু করার মধ্য দিয়ে।
২৮ শে সেপ্টেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৩ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সন্ধিক্ষণে পিতা মুজিবের ঘর আলো করে জন্ম নেয় আজকের জননেত্রী শেখ হাসিনা। জন্ম লগ্ন থেকেই দূরদর্শী ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া। কলেজ জীবনেই পিতা মুজিবের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পতাকা তলে রাজনৈতিক জীবন যাত্রার সূচনা হয় শেখ হাসিনার। এরপর আন্দোলন, সংগ্রাম আর ত্যাগ-তিতিক্ষা বিলিয়ে দেশের জন্য শুধুই এগিয়ে চলা। যা আজো বহমান! একটু একটু করে বিশ্ব দরবারে আজ তিনি ইতিবাচকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের এক বিন্ময়কর রোল মডেল। মানবিকতায় তিনি যেমন সিগ্ধ তেমনী দেশদ্রোহী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদীদের দমনে তিনি ততোটাই পারদর্শী। এমনকি নিজ দলের কেউ অব্দি তাঁর কাছে ভ্রান্ত বা অনৈতিক কাজে পান না রেহাই। তিনি মমতাময়ী, চির শাশ্বত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে হন না বিন্দুমাত্র ক্ষান্ত। তাঁর দীর্ঘায়ু ও সার্বিক সুস্থতা কামনা করি। তিনি বেঁচে থাকুক হাজার বছর ধরে বাঙ্গালীর হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে, প্রতিটি বাঙ্গালীর চির আপন জন হয়ে।
শুভ জন্মদিন জননেত্রী
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ! বাংলাদেশ চিরজীবী হোক…
অনন্য প্রতীক রাউত
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply