আজ ১লা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। বিগত ৩০ বছর যাবৎ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
১৯৯০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বার্ধ্যকতা কোন জাতির জন্য অভিশাপ নয়, প্রবীণদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করণে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক ভাবে এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই দিনটি প্রবীণদের জন্য শুধুই একটি দিন নয়, এ যেন স্মৃতিবেদনাতুর দিন হিসেবে প্রবীণদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রবীণদের কাছে অতীত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সকল প্রবীণদেরই মাঝে এক দীর্ঘশ্বাসের চিত্রের দেখা মিলে। তেমনি একজন প্রবীণ নারী বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ছেতারা বেগম, তিনি জানান, আগের দিন বাঘে খাইছে।” আগের কিছুই এহন আর চোখে ঠাওর পাই না। এমনকি আগে এক বাড়ি ইলিশ মাছ ভাজলে পাশের বাড়ি ও সেই ঘ্রাণের মাতোয়ারা হয়ে উঠত। কিন্তু এহন ইলিশ মাছে সেই ঘ্রাণ আর পাই না।
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা রুমানা আক্ষেপের সুরে বলেন, আগের দিনে ধান মাড়াই করার পর ধানের ঘ্রাণে ছোট কীট পতঙ্গ, পোকামাকড় ও চলে আসতো। কিন্তু বর্তমানে আমার ছেলে মেয়েরা ধানের ঘ্রাণ কী জিনিস বোঝে ও না। কারণ আগের মতো না আছে খাবারে স্বাদ, না আছে ঘ্রাণ। সবকিছুর মাঝেই আধুনিকতার ছোঁয়া। সবকিছুতেই এতটাই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে যে, অনেক কিছুরই প্রকৃত বিশেষত্বের গুণ হারিয়ে ফেলেছে। যা আমাদের মতো প্রবীণদের জন্য বেদনাতুর ছাড়া বেকি নয়!
হে নবীন, আমিও ছিলাম একদিন তোমার মতো, আমারও কম ছিলো না শক্তি-সামর্থ্য। আমার ডায়েরিতে পরাজয় শব্দটি লেখা হয়নি কখনও। কিন্তু আজ! আমি প্রবীণ, নেই আগের মতো পথ চলার সাহস; আমি পারি না এগিয়ে যেতে তোমাদের মতো সমানে সমান। আর তাই বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সুরে তিরস্কার করো না আমায়, ধাক্কা মেরো না আমার ক্ষীণকায় শরীরে।
এমনি বেদনার্ত কন্ঠের আর্তনাদ ছিল সিরাজ সাহেবের, তিনি কালক্ষেপণ না করে বলেন, আগের যুগে শিক্ষকতায় বেতন ছিল না বললেই চলে। মাস শেষ কখন ১০০ টাকা আবার কোন কোন মাসে মোটে ও টাকার দেখা মিলত না। কিন্তু একটা জিনিস মিলতো যা আজকাল মিলে না বললেই চলে, তা হলো ” সম্মান”। আজকাল শিক্ষকদের আগের তুলনায় অনেক বেতন। কিন্তু আজকাল শিক্ষার্থীদের মাঝে নেই নৈতিকতা, মানবিকতা, সৌজন্যতা, ভদ্রতা, বিনয়ী আচারণ। আজকের সম্ভাবনাময় তরুণরা আগামীর মানবসম্পদ ও ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই তরুণ প্রজন্ম প্রবীণদের যথার্থ সম্মান দেয় না। সর্বত্র দেখা যায়, প্রবীণদের বিভিন্ন ভাবে নবীণরা তিরস্কার করে। যা কখনোই প্রবীণদের জন্য কাম্য আচারণ হতে পারে না।” তাই নবীনদের কাছে একটাই প্রত্যাশা আজকে যারা নবীন তারাই যেহেতু আগামীর প্রবীণ। তাই প্রবীণদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করণে নবীনদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
পরিসংখ্যানের হিসেব মতে, ষাট বছরের বেশি বয়সীদের প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সকল প্রবীণরা এই দিনে স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। স্মৃতিবাহী দিনরাত ভেবে কেউ কেউ আবার অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে। প্রবীণদের স্মৃতির ডায়রী গুলো যেন প্রতি বছর ১ লা অক্টোবরে উন্মোচিত হয়। আসুন, শুধুমাত্র বিশেষ একটি দিনে প্রবীণদের পাশে না থেকে সর্বদা প্রবীণদের পথযাত্রায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। ভালো থাকুক ও চিরঞ্জীবী হোক পৃথিবীর সকল প্রবীণরা।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
প্রতিদিনেরসময়/এমএস
Leave a Reply