এইতো সেদিন মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বহুদিনের লালিত রঙিন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সম্মুখীন হয়েছিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সুযোগটা আমার সত্যি পরম পাওয়া ছিল।
পহেলা জানুয়ারী, ক্যাম্পাসে প্রথম দিন অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করেছিল, অপরিচিত মুখের মেলা।ক্লাসে উপস্থিত হয়ে সব অপরিচিত মুখের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। পর্যায়ক্রমে বড়ভাই-আপুরা আসেন, পরিচিত হন খুবই আন্তরিকতা সহিত, এরপর ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকবৃন্দের বক্তব্য যেনো আমাদের সপ্নের পথে এগিয়ে চলার সাহসটা সত্যিই দ্বিগুন করে দিয়েছিল।এই আন্তরিকতার সম্পর্ক শুধু নিজ ডিপার্টমেন্টে সীমাবদ্ধ থাকে নি, মাত্র সাত একরের উপর নির্মিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন কম হলেও এখানে একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ভালবাসার কমতি নেয়।
যদিও মহামারী করোনার কারণে ক্যাম্পাসে বেশিদিন যাওয়া-আসা হয়ে ওঠেনি, তবে এই অল্প সময়েই সবার মধ্যকার আন্তরিকতা ও বন্ধন সত্যি মুগ্ধ করেছে আমাদের। চলমান মহামারীতে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে নিজ দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছে পরিবারের প্রতিটি দায়িত্বশীল সদস্যের মতো।প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুখে-দুঃখে থেকে প্রমানিত হয়েছে আমরা সত্যি একটি পরিবার।
সকালটা শুরু হয় জবির দোতলা লাল বাসে যাত্রা শুরু করে আর সাথে কিছু বেসুরে কন্ঠের গান গুনে ক্যাম্পাসে প্রবেশ। ভার্সিটি যেকোনো ফাংশন যেমন- পহেলা বৈশাখ অথবা অথবা ডিপার্টমেন্ট নবীনবরণ সংবর্ধনা,বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ক্লাসের অবসরে ক্লাসরুমের আড্ডা,প্রিয় শান্ত চত্বরের আড্ডা, শীতের সকালে হালকা রোদ পোহাতে সবাই মিলো প্রিয় কাঁঠালতলায় আড্ডা দেওয়া, টিএসসিতে চায়ের আড্ডা, ক্যাফেটেরিয়াতে বন্ধুরা মিলে খাবার খাওয়া এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে।
পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৮৫৮ সালে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন -২০০৫ পাশ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপ নেয়। শিক্ষা -ইমান- শৃঙ্খলা এই নীতিবাক্য সামনে রেখে মোট ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৬ টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের যাত্রা আমাদের প্রাণের জবির। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় রূপে জবির যাত্রা শুরু করে পনেরো তম বছরে পা রাখলো। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মহামারীর কারণে হয়তো উদযাপনে থাকছেনা জাঁকজমকপূর্ণতা তবে আগামীতে হবে ইনশাআল্লাহ।
এই জবি আজ আমার প্রথম পরিচয়। গর্বের সাথে বলতে পারি, আমি জবিয়ান।
সবশেষে বলতে চাই, এই জবি আমাকে দিয়েছে একরাশ সীমাহীন ভালবাসা নামক এক ঝাঁক বন্ধু। যাদের নিয়ে পাড়ি দিতে চায় ওই বহুদূর। আমাদের আড্ডাগুলো বিকেলবেলা থেকে গোধূলি পর্যন্ত আকাশ দেখার মুহুর্তগুলো আর রাতের আধারের গাঢ়তায় ঠিকে থাকুক আমাদের বন্ধুত্ব।।।
জান্নাতুল মাওয়া শশী
১৫তম আবর্তন
সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply