এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি। তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি,আমার কিছুই আর করার থাকে না।
তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো, যদি দূরে যেতে চাই,
যদি ডুবে যেতে চাই, তুমি দুহাতে জাগাও
এমন সাধ্য কি আছে তোমার চোখের সামান্য আড়াল হই,
দুই হাত দূরে যাই, যেখানেই যেতে চাই,
সেখানেই বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা
তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনো সম্ভব?
মায়া মানুষের আত্মার একটি প্রবৃত্তি। যা মানুষ প্রকৃতিগত, জন্মগতভাবে পেয়ে থাকে। মায়া শুধু আবেগ বা সংবেদনা প্রকাশের মাধ্যমই নয়, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধারণাও বটে। নারী আর পুরুষ পরস্পর সন্নিকট হতে থাকেন মায়ার রাজ্যের নিয়মে। মায়া হল কোন কিছুর প্রতি টান, আকর্ষণ,দুর্বলতা অনুভব করা। মায়া আছে বলেই আমরা মানুষ। মানুষের প্রতি যেমন মায়া জন্মায়, পোষা পশু পাখির প্রতিও যেমন ভালোবাসা জন্মায়, তেমনি মানুষের কর্মস্থলের প্রতিও ভালোবাসা আর গভীর মায়া জন্মায়। প্রতিদিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা কাজের জায়গাটির প্রতি আবেগ কাজ করে। আর সেখানেও থাকে এক অদ্ভুত টান।
ভালোবাসা ও প্রেম শব্দ দুটি আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। আমার মনে হয় শ্রদ্ধাবোধ থেকেই ভালবাসাটা আসে। ভালবাসাটা স্থান,কাল,পাত্র ভেদে যেকোন জায়গায় হতে পারে একাধিক রকম। আদিমতম যে সম্পর্ক তার নাম ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা নিয়ে কতোনা কথা! ভালোবাসার কোন সংজ্ঞা নেই। ইতিহাসের পাতায় ভালোবাসার জন্য জীবন বিসর্জন, সিংহাসন ত্যাগ, অর্থ প্রাচুর্য ত্যাগসহ আরো কতনা ঘটনা রয়েছে। ভালোবাসা অমর ও অক্ষয়। ভালোবাসায় মৃত্যু নেই। আনন্দ আর বিরহ নিয়েই ভালোবাসা। এই ভালবাসা হতে পারে যে কোনো কিছুরই উপর।প্রেম ও এক ধরনের ভালবাসা। প্রেমে ভালবাসা অনিবার্য। সৃষ্টিকর্তা ও তার বান্দাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক হয় আবার নর নারীর চিরচারিত মেলবন্ধন কিন্তু প্রেমের মধ্য দিয়েই হয়। প্রেম কিন্তু ভালবাসার চেয়ে অনেক গভীরতম স্থান। ভালবাসা হওয়া যতটা সহজ প্রেম ততটা নয়। যার তার সাথে প্রেম হয়না। যাকে মনের খুব গহীনে রেখে খুব কাছে পাওয়া যায় কেবল তার সাথেই প্রেম হয়।
মমতা শব্দটি আমার মনে হয় মায়ের ক্ষেত্রে সব চাইতে বেশি প্রযোজ্য। একজন মা তার মমতা দিয়ে সন্তান কে ভালবাসেন। মায়া ও মমতা সমার্থক শব্দ হলেও পার্থক্য গুলি জ্ঞানজাত। প্রেম ও ভালবাসায় মায়া থাকে। প্রেমে মমতা শব্দটি শ্রুতিকটু। মা সন্তান কে মমতা দিয়ে ভালবাসেন। ভালবাসতে মায়া মমতা দুটারই দরকার। প্রেমে ভালবাসা আর মায়া। সব মায়া আবার ভালবাসা নয়। প্রেম-ভালবাসা, মায়া-মমতা এগুলি পেছনের উদ্দেশ্য প্রায় একই। সব শব্দের খেলা।
আমার উপরোক্ত মায়া মমতা প্রেম ভালবাসা এই সুন্দর মধুময় বিষয় গুলা আলোচনার সারমর্ম হলো আমার কর্মস্থলের প্রতি দুর্বলতা। আমার ক্ষুদ্র প্রবাস জীবনের সুখ দুখের অনেক কাহিনী জড়িয়ে আছে এই কর্মস্থলে। অনেক স্মৃতি আর শ্রমযুক্ত ঘাম জড়িয়ে আছে। এই যায়গায় আছে আমার কর্মের প্রেমে পড়ার মতো ঘটনা। অনেকেই হয়তো ভাববেন এটা কেমন কথা। মানুষ মানুষের প্রেমে পড়ে, কিংবা পোষা জীবজন্তু ভালবাসে, অথবা সুন্দর প্রকৃতির স্নিগ্ধতা লাভের আশায় সেখানে ভ্রমণ করে। আর আমার বেলায় হয়েছে ভিন্ন কিছু।
০১অক্টোবর ২০১৫সালে প্রথম প্রবাসে পদার্পণ করি। একে বারেই ভিন্ন লাগতো তখন। হরেক রকমের মানুষ। কি উদ্ভট রকমের ভাষা। কেমন সব আচার ব্যবহার আর মুখশ্রী। ভাবতাম কোন ভিনগ্রহে আসলাম রে বাপু! উফফফফ গরমের কথা আর নাই বা বললাম! ০২অক্টোবর ২০১৫আমি আমার কর্মস্থলে যোগ দেই। অনেক হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছি। অনেক গুলো দিন রাত সপ্তাহ মাস কিভাবে পার হয়েছে টের ই পাইনি। মায়ের মমতা প্রেয়সীর প্রেম ভালবাসা আর একটা অদৃশ্য মায়ার বন্ধনে আটকে আছি এই কর্মস্থলে। জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা এখানেই সঞ্চয় হয়েছে আমার। অসুখ বিসুখ ঝড় বাদলে কোনো কিছুতেই একদিন ও বন্ধ হয়নি আমার কর্মে যোগ দেওয়া। কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে নিজেকে রোবট মনে হতে। আর সে কারনেই সিনিয়রদের আকুন্ঠ ভালবাসা আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। চেয়ার পেয়েছি যোগ্যতার ভিত্তিতে। সুকর্ম মানুষ কে একটা সময় অনেক সম্মানিত আর উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করে কিভাবে তা বুঝেছি। কর্মের মাঝেও যে মায়া মমতা প্রেম ভালবাসা লুকিয়ে থাকতে পারে তা এখানে না আসলে বুঝতে/শিখতে পারতামই না।
প্রবাস মানেই ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন আর দৃঢ় সংকল্পে আবদ্ধ হবার এক শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। চাতক পাখি যেমন মেঘের জলের অপেক্ষায় থাকে প্রবাসীরাও তেমন টা। অনেক কষ্টে আর সুখ শয্যা ত্যাগ করলে কিছুটা আলোর মুখ দেখা যায়। প্রবাসিরা জানেই না বাকি দেশে গেলে কেমন কাটবে তাদের বাকি জীবন। যতো দিন বেচে থাকবো হে প্রিয় কর্মস্থল তোমাকে ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমার অন্তরের অন্তস্থলে মিশে রবে নীরবে নিভৃতে শয়নে স্বপনে নিশী জাগরণে। মমতায় প্রেমে ভালবাসায় জড়ানো প্রিয় কর্মস্থল আমার পরিবার। লেখক জে পি তালাস, সিঙ্গাপুর।
Leave a Reply