নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি দু’টি কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেরাই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি সমর্থিত পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ। উভয়পক্ষ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ধারা জারি করেন।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পূর্ব নির্ধারিত তারিখে কালিয়া পৌর শহরের ডাকবাংলোয় নবনির্বাচিত উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃবৃন্দদেরকে উপজেলা আ’লীগের পক্ষ থেকে গণ সংবর্ধনা, পরিচিতি সভা ও আনন্দ মিছিল করার আয়োজন করা হয়। অপরদিকে, এমপি মুক্তির পক্ষের পদবঞ্চিতদের পাল্টা কমিটির নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে একই সময়ে পৌর শহরের ভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচীর ডাক দেয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি নিয়ে নড়াইল-১ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গণে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ছাত্রলীগের দু’পক্ষই কালিয়া পৌর শহরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফলে যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন নেতা-কর্মীরা। জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) প্রায় আট বছর পর কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এফ এম সোহাগকে কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাইসুল ইসলাম পান্নুকে সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর ছাত্রলীগের এমএম তানবীরুল ইসলামকে সভাপতি, প্রশান্ত কুমার দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নবনির্বাচিত এ কমিটি দু’টির নেতৃবৃন্দ নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা ইয়ামিন বিশ্বাস ও মহিবুল হক অনিকের নেতৃত্বে একটি অংশ এমপি মুক্তির অনুসারী। শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) অনুমোদিত কমিটিকে ছাত্রলীগের এমপি মুক্তির পক্ষের অনুসারীরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কালিয়া পৌর শহরে একটি মিছিল করে। এ সময় কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি ইব্রাহিম শেখ পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।
অনুমোদনবিহীন তার ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়ামিন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মহিবুল হক অনিক, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়ামত হোসেন প্রান্ত ও সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম হৃদয়কে মনোনীত করা হয়। তাদেরকে ওইদিন এমপি করিরুল হক মুক্তি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
কালিয়া ছাত্রলীগের এই পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমানে এমপি মাশরাফি-নিলু খানের অনুসারী কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষের সমর্থিত ছাত্রলীগের পক্ষই ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে।
দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকার কারণে উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার সকালে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সকাল-১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কালিয়া পৌরসভার মধ্যে সকল প্রকার মিছিল-সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মর্মে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মীম জানান, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগ ছাড়া বিদায়ী কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বা স্থানীয় এমপির কোনো কমিটি ঘোষণা বা অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ারই নেই। তাই বিতর্কিত পদবঞ্চিতদের নিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে, সেটি অবৈধ ও হাস্যকর।’
এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ, কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সময়োপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য কমিটি ঘোষণা করেছে। এটি বৈধ কমিটি। এমপি কবিরুল হক মুক্তি ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম শেখ মাদক মামলার আসামী, সাজাপ্রাপ্ত ও বিবাহিত পদবঞ্চিত কয়েকজনকে দিয়ে হাস্যকর কমিটি করে দলের ভাবমূত্তর্ী ক্ষুন্ন করছেন। অপরদিকে, তাঁরা পূর্বের ন্যায় সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন।’
এ বিষয় উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর জন্য এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারাজারি করা হয়েছে। তারপরও প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় থাকবে।’
একই প্রসঙ্গে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির (০১৭১১-১৯২৬৩৭) অভিমত বা বক্তব্য জানার জন্য সকালে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। #