নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সমাজসেবা অফিসের ভাতা কার্ড নিয়ে চলছে হরিলুট। সমাজসেবা অফিসের ফিল্ড সুপারভাইজার মোঃ তমিজ উদ্দিনকে ঘুস না দিলে মিলেনা ভাতার কার্ড। ঘুষ ছাড়া সরকারী ভাতা মিলছেনা এমন অভিযোগ আছে পুরো লোহাগড়া উপজেলা জুড়ে। একটানা ১৩ বছর লোহাগড়া সমাজসেবা অফিসে কর্মরত থাকায় তমিজ উদ্দিন রাম রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।
কখনো তিনি নিজে আবার কখনো ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের মাধ্যমে হস্ত লিখিত চিরকুট দিয়ে ঘুষ নিয়ে কার্ড করে দেয়। অনেকে টাকা দিয়েও বছরের পর বছর ঘুরছে অসহায় ভাতা প্রার্থীরা। সরকারী সামাজিক সুরক্ষা ভাতা এখানে জনপ্রতিনিধিদের সুরক্ষার অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা ভাতার কার্ড বাবদ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে নিলেও তমিজ উদ্দিনকে ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা করে দিতে থাকেন। সরেজমিন পুরো লোহাগড়া এলাকায় প্রায় শতাধিক মানুষের কাছে গিয়ে পাওয়া গেছে সরকারী ভাতার নানা অনিয়মের তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের মাইগ্রামের অসুস্থ্য তৈয়ব আলী খন্দকার। গত ৩ বছর ঘুরে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও বয়স্ক ভাতার কার্ড না পেয়ে মারা যায়। পরে সেই টাকায় তার স্ত্রী আলেয়াকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া কথা বলে ঘুরাচ্ছে ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসন (৪,৫,৬)’র সাবেক মেম্বর বিউটি রাণী মন্ডল। ভাতা কার্ড ও টাকা ফেরত না পাবার যন্ত্রনায় নানা জায়গায় অভিযোগ করেও সমাধান পাননি ওই বিধবা।
ওই ইউনিয়নের চর কোটাকোল গ্রামের মাহাতাব শেখের ছেলে খালিদ শেখ (১৫) বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। গত ১ বছর আগে খালিদের মা লিপি বেগম ৬ হাজার টাকা বিউটি রাণী মন্ডলের হাতে তুলে দিলেও ভাতার বই এখনো না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ শামীম রেজার কাছে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহ হয়নি।
কাশিপুর ইউনিয়নের ধোপাদহ গ্রামের মৃত আলাল বিশ্বাসের ছেলে অমিত কুমার বিশ্বাস (৭৩) শারিরীক প্রতিবন্ধী। প্রায় এক বছর আগে ৬ হাজার টাকা বিউটি রাণী মন্ডলের কাছে দিয়েও ভাতার বই না পেয়ে তিনি এখন নিরুপায়। এদিকে, দিঘলিয়া ইউনিয়নের কামাল শেখ, শালনগর ইউনিয়নের চাকসী গ্রামের রহিমা, একই গ্রামের শওকত, কাশিপুর ইউনিয়নের চালিরঘাট গ্রামের খোকন, শালবরাত গ্রামের আসমা, কোটাকোল ইউনিয়নের মুক্তা, চর কোটাকোল গ্রামের হাসিনা বেগম এরা সবাই বিউটি রাণী মন্ডলকে ভাতার কার্ডের জন্য ৬ হাজার টাকা করে দিয়ে দীর্ঘদিন ঘুরছে। আর বিউটি রাণী মন্ডল সমাজসেবা অফিসের এজেন্ডের মধ্যে বড় এজেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুল বুঝিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, শালনগর ইউনিয়নের বাতাসী গ্রামের মেম্বর সাজ্জাদুল ইসলাম পাশ্ববর্তী শিয়রবর গ্রামের বারেক শিকদারের স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪৮)’র কাছ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বামী জীবিত থাকার পরেও বিধবা কার্ড করে দিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। একই গ্রামের মহাসিন শেখের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৫৭) বয়স না হলেও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা। আলম শেখের স্ত্রী জরিনা বেগম (৪৫) এর কাছ থেকেও ৬ হাজার টাকা নিয়ে বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দিয়েছে মেম্বার সাজ্জাদুল ইসলাম।
এদিকে, ইতনা ইউনিয়নের ইতনা পূর্ব পাড়ার বিধবা আয়সা বেগম (৬৫) টাকা দিতে না পারায় ভাতার কার্ড হয়নি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমি গরীব মানুষ, টাকা কোথা থেকে দেব, আর টাকা না দিলে কার্ড হয় না।
বিউটি রাণী মন্ডলের কাছে টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কার্ডের জন্য তমিজ উদ্দিন আমার নিকট থেকে প্রথমে ২৫শ করে টাকা নেয়। পরে ভাতার বই দেওয়ার সময় বাকি ৫’শ করে দিতে হয়। এখনো আমার তার কাছে ১০টি কার্ডের টাকা জমা দেওয়া রয়েছে। সে নিজ হস্তে লিখে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এই টাকার এক অংশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পান বলেও তিনি জানান।
শালনগর ইউনিয়নের বাতাসী গ্রামের মেম্বর সাজ্জাদুল ইসলাম তিনি কার্ড তৈরীর কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো এ খবরে আমার বিরুদ্ধে গভীর সড়যন্ত্র চলছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সমাজসেবা অফিসের ফিল্ড সুপারভাইজার মোঃ তমিজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে সাংবাদিককে ডুকুমেন্টস দেখাতে বলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’#
Leave a Reply