দুর্নীতি শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের সমস্যা নয় বরং এটি বৈশ্বিক সমস্যা । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য দুর্নীতি আরো ভয়ানক প্রভাব ফেলে, যেখানে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে নানা পরিকল্পনা সেখানে দুর্নীতি নামক শব্দটা বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উন্নয়নের পথে এটা একটা অভিশাপ এর বিরোধিতার জন্যই প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দিবস। প্রচার ,প্রচারণা ,জনসমাবেশ, মিটিং মিছিলের মাধ্যমে সকলকে জানান দেওয়া হয় দুর্নীতির প্রভাব সম্পর্কে সেইসাথে আহ্বান করা হয় দুর্নীতি দমনে এগিয়ে আসার জন্য।
দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা বলেই বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে । আগে আমাদের দেশে দিনটি সরকারিভাবে পালন করা হতো না । কালক্রমে এর ভয়ানক থাবায় গ্ৰাসিত হচ্ছে পুরো দেশ। সেই উপলব্ধি থেকেই সরকারি ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন সরকারিভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে । ২০১৭ সাল থেকেই এ দিবসটি সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে । এ দিবসের যথাযথ তাৎপর্য রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন করা অতীব জরুরী। সরকারি ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট ও সুদৃঢ় হয়েছে। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলের একতাবদ্ধ প্রয়োজন।
স্বাধীন রাষ্ট্র , স্বাধীন জাতি, সেইসাথে স্বাধীনচেতা ভাবে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ছে। আমরা অসচেতন নয় বরং সচেতনতার সাথেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ি । যার প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে সমগ্র দেশ ও জাতি।
গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং এই অগ্রযাত্রায় আমাদের প্রধান বাধা দুর্নীতি । সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে মে সকল দেশ দুর্নীতি দমনে সফল হয়েছে তার এগিয়ে গেছে । আর যেখানে দুর্নীতি প্রতিনিয়ত বিরাজ করছে সেখানে উন্নয়ন কথাটা নাম মাত্রই প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ২ থেকে ৩ % গ্রাস করছে দুর্নীতি । শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় সকল প্রকার উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে দুর্নীতি। দুর্নীতি দমনের জন্য গঠিত হয়েছে (দুদক)। তবে আইনের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে এর কর্মতৎপরতা আশানুরূপ সক্রিয় নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অঙ্গীকারের সঙ্গে বাস্তবায়নের মিল না থাকায় দুর্নীতি প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়ছে । দুর্নীতি একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সেই আইন সবার জন্য সমান নয় । আমাদের দেশে বড় বড় রাজনৈতিক কর্মীরা অনায়াসে দুর্নীতি করে চলেছে যারা ক্ষমতাবান তারা দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায় । তবে এটা দেশের জন্য কাম্য নয়।
আমাদের জীবনের সাথে বৈধ উপার্জনের কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি । আমাদের দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বোঝা যায় দুর্নীতি একটি চলমান বিষয় যেখানে এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সততা আদর্শ ও মূল্যবোধ লোপ পেয়ে সামগ্রিকভাবে জাতীয় বিপর্যয় সৃষ্টি করছে দুর্নীতি । আর এটা প্রতিরোধ করা না গেলে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সকলকে আহ্বান করা হয় দুর্নীতি দমনে শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। আমরা যদি নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে উঠি তাহলে আমরা উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিত হতে পারব না । দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ কখনোই আদর্শ জাতির পরিচয় বহন করতে পারে না।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দিবসে সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য । হোক সে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক কর্মী, তার অপরাধকে অন্যান্য অপরাধের মতোই গণ্য করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে । সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে কেননা নিত্যনতুন উদ্যোগ আমাদের দেশের নেওয়া হয় কিন্তু তা কার্যকর হয় না । সর্বোপরি আমাদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। প্রতিটি দিন হোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দিন তবেই দেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত।
লেখক: শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply