বিতর্ক সংঘ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদলিপি দিলেও তার ব্যাখা নেই স্বয়ং প্রচার সম্পাদকের কাছেই। ফলে অসংগত প্রতিবাদলিপি দেওয়ার কারণ বা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
প্রতিবাদলিপি সম্পর্কে জানতে, প্রচার সম্পাদক নুরুজ্জামান নিয়নের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো ব্যাখা দিতে পারেননি। উপরন্তু ঘুড়িয়ে-পেঁচিয়ে উত্তর দেন ও অপ্রয়োজনীয়, অসংলগ্ন কথা বলে প্রতিবেদককে বিব্রত করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত এক সাংবাদিক নেতার পরিচয় দিয়েও কথা বলার চেষ্টা করেন।
গত ১৯ নভেম্বর জবি ডিবেটিং সোসাইটির (জেএনইউডিএস) সভাপতি পদে রদবদল আনে জবি প্রশাসন। পদের পরিবর্তন নিয়েই যত জলঘোলা। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সংগঠনের অফিসিয়াল প্যাডে এককভাবে প্রতিবাদলিপি দেন জেএনইউডিএস'র প্রচার সম্পাদক নুরুজ্জামান নিয়ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রকাশিত রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ গত ৭ নভেম্বর শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয় হয়েছে এবং বর্তমান কার্যকরী কমিটির সভাপতির ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মুলহাম হায়দার গালিবকে সভাপতির (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে দেওয়া প্রতিবাদলিপিতে নিয়ন বলেছেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জেএনইউডিএস - এর বর্তমান সভাপতিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সহ - সভাপতিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে যা সম্পূর্ণরূপে জেএনইউডিএস - এর গঠন্ত্রে এবং সংবিধান বিরােধী । এরকম সিদ্ধান্তের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি । জেএনইউডিএস - এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রত্ব থাকা অবস্থায় যেকোন কমিটির নির্বাচিত সকল কার্যনির্বাহী সদস্য সম্পূর্ণ ১ ( এক ) বছর দায়িত্ব পালন করে থাকেন । মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘােষণার আগ পর্যন্ত উক্ত কমিটি আগের মতই ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন । যদি গঠনতন্ত্রের কোন বিষয়ে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকে তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমিটির দুই তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান করা হয় । কিন্তু হঠাৎ করেই কমিটির সাথে কোন রকম আলোচনা না করে সভাপতিকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যা জেএনইউডিএস - এর গঠনতন্ত্র বিরােধী । এরকম সিদ্ধান্তের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।
তবে তার এই প্রতিবাদলিপির যেসব তথ্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, প্রথমত শুধুমাত্র প্রচার সম্পাদক কিভাবে সংগঠনের প্যাডে প্রতিবাদলিপি দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, গঠনতন্ত্রের অস্তিত্ব। তৃতীয়ত, মডারেটরের ভূমিকা। চতুর্থত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে এই সিদ্ধান্ত দিলো।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয়, প্রচার সম্পাদক নিয়নের সাথে, নিয়ম হচ্ছে প্রচার সম্পাদক দেয়," কিন্ত সবার সমর্থন নিয়ে ভিসি স্যারের কাছে জমা দেওয়া আছে, সবকিছু নিয়ম মেনে হচ্ছে। যেহেতু প্রচার সম্পাদকের সাক্ষর লাগে, আমি ফরমালিটি পালন করেছি।"
মডারেটরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি হঠাৎ অাক্রমনাত্মক হয়ে উঠে প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট বক্তব্য না দিয়ে অসংলগ্ন ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে থাকেন। তিনি প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কি আসলে আমাকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর বের করতে চাইছেন নির্দিষ্ট? আপনি আমাকে ডিরেক্ট বলেন, আপনাকে আমি সেই উত্তরটা দিয়ে দিই। আপনি যদি প্রশ্ন করে খোঁচায় খোঁচায় কোনো উত্তর বের করতে চান, তা আপনি চাইলে পারেন কিন্তু সেই উত্তরটা আপনাকে আমি ওভার ফোন দিবো না। আপনি কেনো আমাকে প্রশ্ন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এককভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কি জানতে চাইলে তিনি টপিকস এড়িয়ে যেয়ে বলেন, এখন যদি সরাসরি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে সরাসরি দেওয়া যাবে।
সরাসরি কি বলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওভারফোন এভাবে আপনার সাথে কথা বলবো না।
এবিষয়ে ছাত্রত্ব না থাকায় সভাপতি পদ থেকে অপসারণ হওয়া জুনায়েদ ইমনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দীন ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে কয়েকদফা ফোনা দেওয়া হলেও তিনি অজানা কারণে ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জেএনইউডিএস'র মডারেটর সুমন কুমার মজুমদার বলেন, ‘নভেম্বরের ৭ তারিখে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। যেহেতু কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হয়, কিন্তু এখন নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে করণীয় সম্পর্কে জনাতে চাওয়া হয়েছিলো। তারই প্রেক্ষিতে প্রশাসন এই চিঠি দিয়েছে। তারা বলেছে নির্বাচনের মাধ্যমেই কমিটি হবে, বর্তমান কমিটির সভাপতির ছাত্রত্ব না থাকায় সহ-সভাপতি সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
জেএনইউডিএস এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, জেএনইউডিএস এর কোন গঠনতন্ত্র নেই। নতুন গঠনতন্ত্র কিছুদিনের মধ্যে আমার হাতে আসবে।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক কামালউদ্দিনকে মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
You cannot copy content of this page