মাগুরায় পুলিশ অফিসের দুই কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাৎকারীর সহযোগী পশুরোগ চিকিৎসক আমজল মুন্সি হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের কারণে এলাকায় দাপট বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজমল মুন্সির বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
গত ২৮ ডিসেম্বর বিকালে তদন্ত সাপেক্ষে আজমল মুন্সির বাড়িতে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে আজমল মুন্সিকে বাড়ি পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী শরিফা বেগম টাকা আত্মসাতের বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা জাফর মুন্সি সাংবাদিকদের কাজে বাধা প্রদান করেন এবং দেশীয় অত্র (দা) হাতে করে নাচাতে নাচাতে নিজেকে বিএনপি’র বড় নেতা ও এলাকার মাতুব্বর হিসেবে জাহির করতে থাকেন।
মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত দুই কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৩ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত একটি চক্র এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল মশিউর রহমান (কং-৬৫৮) ২০১৬ সাল থেকে ক্যাশ সরকার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরতদের বেতন, ভ্রমণ ভাতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ সব ধরনের বিল-ভাউচার হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা, চেক গ্রহণ এবং সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করতেন। সেই সুযোগে গত মাসের ৩০ তারিখে মশিউর রহমান হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর জাহাঙ্গীর হোসেন শিকদারের ড্রয়ার থেকে দুটি ব্যাংঙ্কে চেক চুরি করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে মশিউরের কাছ থেকে চেক দুটি উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ওই চেকে ইচ্ছামাফিক নাম এবং অর্থের পরিমাণ বসানো হয়েছিল। পরে চেক দুটির অনুকূলে ব্যবহৃত টোকেন নম্বর, অর্থের পরিমাণ এবং অ্যাডভাইস পেপার যাচাইকালে বড় মাপের জালিয়াতি ধরা পড়ে। তবে প্রক্রিয়াটির শুরু ৩ বছর আগে হওয়ায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তারা।
সূত্রটি জানায়, ওই ঘটনার পর বিগত সময়ে পুলিশ অফিসের নির্ধারিত কোডে পরিশোধিত বিভিন্ন চেক যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে মাগুরা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস কনস্টেবল মশিউর রহমানের চেক জালিয়াতির আরও অনেক তথ্য-প্রমাণ পায়। দেখা যায়, কনস্টেবল মশিউর মাগুরা পুলিশ অফিসের কোডের অনুকূলে পরিশোধিত ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৩ টাকা আজমল মুন্সি নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। এদিকে, কনস্টেবল মশিউর বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ধলইতলা গ্রামে গেলে কনস্টেবল মশিউর এর বাড়ির লোকজন ঘটনাটি অস্বীকার করেন এবং আজমল মুন্সীকে তারা চেনেন না বলে জানান। এ ছাড়া ফিরোজ হোসেন নামে অপর এক কনস্টেবলের অ্যাকাউন্টে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২শ’ টাকা এবং জনৈক রুকাইয়া ইয়াসমিন বিচিত্রা নামে অপর একজনের অ্যাকাউন্টে ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪শ’ টাকা জমা করা হয়েছে।
মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, চেক জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।#
You cannot copy content of this page