অনলাইন ডেস্কঃ
এক রূপকথার গল্পের নায়ক মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে যাকে জীবিকার সন্ধানে দেশ ছাড়তে হয়েছিল, ছোট ভাইবোনের দায়িত্ব ছিল কাঁধে, তার পক্ষে কতটা শিক্ষানুরাগী হওয়া সম্ভব? হ্যাঁ এমনই একটি প্রশ্নের জলজ্যান্ত উদাহরণ কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামে জন্ম নেওয়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। বর্তমানে তিনি আমেরিকা প্রবাসী। কিন্তু তার হাতে গড়ে উঠেছে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই তিনি অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। তিনি ভেবেছেন দেশের কথা। নিউইয়র্কে কখনও ট্যাক্সিক্যাব চালান, কখনও কাজ করেন ফাস্টফুডের দোকানে। এমনকি প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে নির্মাণশ্রমিক হিসেবেও কাজ করেছেন। দেশে না থাকলেও এখন এলাকাবাসী তাঁকে সবসময় স্মরণ করেন তাঁর সমাজসেবামূলক ধারাবাহিক কর্মকান্ডের কারণে। তিনি এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও আর্থিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আমেরিকা প্রবাসী শিক্ষানুরাগী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী।
নিজস্ব অর্থায়নে তিনি কুমিল্লার ব্রাম্মণপাড়া কলেজ পাড়া ও ধান্যদৌলসহ বিভিন্ন গ্রামে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কর্মহীন, গরীব ও অসহায় পরিবাররের মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করিয়েছেন।
তিনি এলাকায় একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত। ব্রাম্মণপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ব্রাম্মণপাড়া আব্দুল মতিন খসরু মহিলা কলেজসহ ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। এক রূপকথার গল্পের নায়কের ন্যায় মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী এসবও করেছেন আমেরিকায় ট্যাক্সি চালিয়ে। তিনি নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালিয়ে আয় থেকে বেশিরভাগটাই খরচ করেন পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য।
তার যেন উদ্দেশ্য একটাই, কোনো মতে দিন কাটিয়ে টাকা জমাতে হবে। জনহিতকর কাজে লাগাতে হবে। আর এই কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে মানুষের বিপদে আপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, নিউইয়র্কে কখনো ডিম, কখনো ডাল বা আলু ভর্তা দিয়ে দু বেলা খেয়ে কোনোরকমে তার দিন কাটে। আয়ের এক অংশ পরিবারের জন্য দেন, অবশিষ্ট টাকা সামাজিক কাজে ব্যয় করেন। কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছেন কেজি স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুনেছেন এবং দেখছেন নিজ জন্মভূমিতে ভয়াল করোনার কারণে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সেই থেকে ভাবতে থাকেন নিজ এলাকা ব্রাম্মণপাড়ার কথা।তিনি তার সেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে গোপনে গোপনে মধ্যবিত্ত ও অসহায় পরিবারের তালিকা করতে থাকেন এবং টাকা পাঠিয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন খাদ্যসামগ্রী কিনে যেন রাতের আঁধারে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। কোন ফটোসেশন যেন না হয়, সেদিকেও তার ছিল কড়া নির্দেশনা।
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী জানান, করোনাকালে ২ শতাধিক অসহায় পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবন, আলুসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন না সবাই, সে কারণে ত্যাগের মহিমা অমূল্য এক গুণ। দামি এক সম্পদ, যা টাকার পরিমাপে মাপা যায় না। স্বার্থপরতায় অন্ধ পৃথিবীতে ত্যাগের কীর্তি স্থাপন করেছেন অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ, যারা পৃথিবীকে দিয়েছেন মানবিক সৌন্দর্য। বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী সে রকমই একজন বিরল গুণী মানুষ।
যেভাবে বেড়ে ওঠেন:
১৯৬৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী ও মোসাম্মাৎ আশেদা খাতুন চৌধুরী দম্পতির ঘরে প্রথম সন্তান মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী জন্ম নেন। মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ১৯৭৪ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা আবদুর রাজ্জাক চৌধুরীকে হারান। ৬ সন্তানকে বুকে নিয়ে মায়ের সংগ্রামী কঠিন পথচলা দেখেছেন। চাচাদের সহায়তায় চলতো কোনো রকমের জীবনযাপন। সাধারণ একটি পরিবার থেকে উঠে এসে অসাধারণ এক অবস্থান তৈরি করেছেন তাঁর পরিশ্রম, মেধা, সততা ও উদার-মানবিক মনমানসিকতার কারণে। তাঁর পরিবারের অর্থের চাকচিক্য ছিল না। বিপুল সম্পদ অর্জনের জন্য পরিবারের চাপও ছিল না। কারণ বাবা-মা সবসময়ই বলেছেন আদর্শের কথা, সৎভাবে জীবনযাপনের কথা। মানুষের কল্যাণে জন্য জীবন উৎসর্গ করার কথা। পরিবারের সেই শিক্ষাই পাথেয় করেছেন মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী।
ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থে গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া, পরিবেশ রক্ষা ও নানা ধরণের জনহিতকর কাজ করেছেন। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক কার্যক্রম দেশ-বিদেশে মানুষের মুখে মুখে। তিনি ১টি-২টি নয়, এলাকায় ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, একটি মহিলা কলেজ ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা এবং একটি কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে।
দৃষ্টান্ত স্থাপন করার উদ্যোগ:
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৮৩ সালে জীবিকার তাগিদে কাতার যান। সাড়ে ৫ বছর পর বিদেশ থেকে দেশে এসে জনমানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৮৮ সালে গ্রামে ঈদগাহ ও কবরস্থান করেন। ১৯৮৯ সালে ধান্যদৌল গ্রামে বাবার নামে আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। ২০০২ সালে মুমু-রোহান চাইল্ড কেয়ার প্রি-ক্যাডেট কিন্ডারগার্টেন নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী তিন শতাধিক। অসহায় গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার জন্য এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী।
১৯৯৪ সালে মা ও দাদির নামে আশেদা-জোবেদা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। ৫ বছর পর ১৯৯৯ সালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদরে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ^বিদ্যালয় কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। ১০টি বিষয়ে অনার্সসহ ১টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে এ বিশ^বিদ্যালয় কলেজে। এর পাশাপাশি মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ১৯৯৯ সালেই উপজেলা সদরে সাবেক আইনমন্ত্রী, বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরুর নামে মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যা ৫ শতাধিক।
জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী সেরা টপ টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরাবরই জায়গা করে নিয়েছিলো মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজটি। পাসের হারও শতভাগ। ২০১৮ সালে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার শতভাগ। আবদুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাসের হার শতভাগ এবং আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে পাসের হার ৯৮%। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষানুরাগী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, ভালো ফলাফলের কারণে প্রতি বছরই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে।
কিভাবে তিনি গড়লেন একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক বাবার সংসারে অভাব-অনটন ছিল। একজন শিক্ষকের পক্ষে আর কত টাকাই উপার্জন করা সম্ভব? ভেবেছিলাম অনেক লেখাপড়া করব। উচ্চশিক্ষা অর্জন করবো। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে বেশিদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারিনি। এই আক্ষেপ সবসময় আমাকে ভাবাতো, কষ্ট দিতো। তখন থেকেই ভেবেছি সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। অভাবগ্রস্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার জন্য কিছু করতেই হবে। এই দর্শন এলাকার শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগ নেয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলা যায়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে ব্যতিক্রম ও ত্যাগী ভূমিকা রাখার পেছনে তাঁর বাবা ও বাবার দাদা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৩৭ সালে নিজ গ্রামে ধান্যদৌল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তার বাবার দাদা মরহুম সিরাজ খান চৌধুরী। স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর বাবা মরহুম আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী ১৯৫৭ সালে রাঙামাটির মতো দুর্গম এলাকায় জ¦ালিয়েছেন শিক্ষার আলো। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজের এলাকা থেকে শিক্ষক নিয়ে সেখানে চাকরি দেন। দাদা, বাবার মতো শিক্ষার আলো বিলিয়ে তৃপ্তি পান মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী।
আরও নানা উদ্যোগ:
শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, আরও নানা সমাজসেবামূলক কাজ নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছেন তিনি ২০১০ সালে ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণে দান করেন ১ বিঘা জমি, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। নিজ খরচে দুটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঈদগাহ, কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। টাকার অভাবে গরিব-ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষাবঞ্চিত না হয়, সে জন্য নিজের নামে ‘মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ গড়ে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছেন প্রতি বছর। এ ধরণের মানবিক উদ্যোগ নাড়া দিয়েছে এলাকার মানুষের মনে।
এলাকার জনকল্যাণে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর অবদান সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপকালে উঠে আসে, দলমত-ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে তিনি। উদাহরণ দিতে গিয়ে জনৈক হিন্দু ব্যক্তি জানান, অত্যন্ত জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল ব্রাহ্মণপাড়া শ্রী শ্রী কালীমন্দির। উপাসনা ব্যাহত হচ্ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। মন্দির প্রাঙ্গণে প্রায় শতবর্ষী ওই গাছটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে গাছটি ১ লাখ টাকায় কিনে আবার মন্দিরকেই দান করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ উদ্যোগে আনন্দ ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তারা মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: মানসেবাই ব্রত
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী মানবসেকাকেই ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত বাবার স্কুল গড়ার স্বপ্নকে আমি একে একে বাস্তবে রূপ দিয়ে চলেছি। সমাজসেবার এই ব্রত অব্যাহত রাখতে পারলেই স্বস্তি পাবো।’ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা আরও মানসম্মত করতে চাই। সেটা কিভাবে করা সে লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে সমন্বয় করে উদ্ভূত বর্তমানে সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বিদেশে পাড়ি জমালেও স্ত্রী-সন্তানদের দেশে রেখে বিদেশের বুকে মেসের কষ্টকর জীবন পার করেছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে নেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে একা কোনোরকমে মেসে থাকি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেলে খরচ বেড়ে যেত। তাছাড়া গ্রামে যে কাজগুলো করছি, সেগুলো করা সম্ভব হতো না। আমি সবসময় আমার স্ত্রী ফয়জুন নাহার চৌধুরী পিনু এবং দুই সন্তান নওশীন তাবাসসুম খান চৌধুরী ও ফারহান খান চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তারা সকলেই আমার সামাজিক কর্মকা-কে উৎসাহ দিয়ে মানসিকভাবে সমর্থন করে আমাকে সহযোগিতা করে আসছে।’
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করেন তিনি। শেখ হাসিনার উন্নয়নের একজন সাধারণ যোদ্ধা হিসেবে তিনি করছেন বলে মনে করেন। মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী তাঁর অগ্রযাত্রায় যাঁরা বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন। এদের অন্যতম হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, দাদা জাকির খান চৌধুরী ও সহধর্মিনী ফয়জুন নাহার চৌধুরী পিনু।
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী সম্পর্কে আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য যা যে কোন ভাবুক মনের মানুষকে নাড়া দিবে। আমেরিকার মতো শহরে কয়েক বছর থেকেই অন্যেরা আমেরিকাতেই বাড়ি করছেন কিন্তু সেখানে প্রায় তিন দশক নিউইয়র্কের মতো শহরে কাটালেও সেখানে তার কোন বাড়ি ঘর নেই বা কিনতে সক্ষম হন নি। এমনকি পরিবার পরিজনদেরও সেখানে নিয়ে যেতে পারেননি। তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চাইলে বলেন আসলে অন্যান্য কাজে নিজেকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখতে গিয়েই সেটি সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। সহজ সরল এই উত্তরটির মাঝে বারবার যেন প্রতিধ্বনি হচ্ছিল ‘একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার, কেন বাঁধো দালান ঘর’।
Leave a Reply