হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র সংবাদদাত:ট্রাম্প দ্বিতীয় অভিশংসনের খড়গ কাটিয়ে উঠলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এক অজানা আতংক তাড়া করছে সাবেক এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রেসিডেন্টকে। এখন সর্বদা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও ভয়ের মাঝে আছেন। সিনেটে দলীয় লাইনের ভোটে অভিশংসন আদালতে পার পেলেও আগামী দিনে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় নিজের ভূমিকা ও অন্যান্য অপকর্মের কারণে ফৌজদারি অভিযোগে দণ্ডিত হতে পারেন বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতদিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে সাংবিধানিক আইনি যে সকল সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন এখন সেই সুরক্ষা ঢালও নেই মাথার ওপর।
এদিকে এরই মধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ, জর্জিয়া ও নিউ ইয়র্কের আ্যটর্নি জেনারেলরা তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে- জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটস ব্রেড রাফেন্সপ্যারগারের। ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে সরাসরি তাঁকে ফোন করে হুমকি-ধামকি দেয়া ছাড়াও যে করে হোক প্রায় ১১ হাজার ভোট তাঁর পক্ষে ব্যবস্থা করে দিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এনিয়েই।
এসবের বাইরে পুনরুজ্জীবিত হতে পারে পর্নোস্টার স্টমি ড্যানিয়েল সহ দুই মহিলার যৌন হয়রানির মামলা। আছে ট্যাক্সের ঝামেলা। বহু বছর তিনি সরকারকে কোন ট্যাক্স দেননি। রয়েছে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে নানা ধরনের আইনি জটিলতা। এখন সাবেক প্রেসিডেন্টকে আদালতে নিতে আইনি বাঁধা অপসারিত হওয়ায় তাঁকে এসবের মোকাবিলা করতে হতে পারে। অন্যদিকে, পেন্ডামিক ও ৬ই জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকার কারণে তাঁর ব্যবসায় ধস নেমেছে। সব মিলিয়ে তিনি বড় রকমের বেকায়দায় পড়েছেন।
তাঁর দলের সিনেট মাইনোরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেলও সিনেটে ভোটের পরে ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের সন্ত্রাসী হামলা ও অভ্যুত্থান ঘটনায় দায়ী বলে মনে করেন। যদিও ম্যাককনেল ট্রাম্পের খালাসের পক্ষেই ভোট দেন। সিনেট ফ্লোরে দেয়া বক্তৃতায় ম্যাককনেল বলেন, ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে কোন ফৌজদারি আদালতে মামলা চলতে বাঁধা নেই। ম্যাককনেল বলেন, আইনি ব্যবস্থার উচিত ক্যাপিটল দাঙ্গায় ট্রাম্পের ভূমিকার বিষয় বিবেচনা করে দেখার। কেননা ট্রাম্প এখন একজন সাধারণ নাগরিক ।
ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তাঁর এমন উদ্বেগ উৎকন্ঠার কথা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা সিএনএন। ট্রাম্প এই বিষয়টি বুঝতে পেরেই এতদিন ধরে নীরবতা পালন করে চলেছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। যদিও তিনি সিনেটে খালাস পাওয়ার পর আবার ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু একান্ত আলোচনায় ট্রাম্প তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন হয়তো ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলের হামলার ঘটনায় তাঁর ভূমিকার জন্য ফৌজদারি প্রসিকিউশনের মুখোমুখি হতে পারেন। আর এমনটা হলে তাঁর দ- থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই।
তাঁর মিত্রদের অনেকেই এখন এমনটা বলছেন। নর্থ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর টম টিলিস ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিলেও তিনি বলেছেন, কোন প্রেসিডেন্টই আইনের উর্ধ্বে নয় এবং ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তও নয়। এমনকি ট্রাম্পও নয়।
ফেডারেল তদন্তকারীরা ক্যাপিটল হামলার সবদিক খতিয়ে দেখছে। ভারপ্রাপ্ত মার্কিন আ্যটর্নি জেনারেল মাইকেল শেরউইনকে ক্যাপিটল হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই ঘটনার জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আসতে হবে। কেউই কোন রকমের ছাড় পাবেন না। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সকলের ভূমিকা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যার বিরুদ্ধেই প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে অভিযোগ গঠন করে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
You cannot copy content of this page