ডেস্ক রিপোর্টঃ ইতালী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল বলেছেন, ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি বিত্ত-বৈভবের বিভাজন নির্বিশেষে এক মহাঐক্যে জাগ্রত করেছিলেন মহাভাষণের মাধ্যমে। এই মহাভাষণের পটভূমি তিনিই তৈরি করেছিলেন তার দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
বাঙালির মুক্তির সোপানে আগুন ঝরা মাস মার্চ প্রতিবারই আমাদের আন্দোলিত করে, স্ফুলিঙ্গ ছড়ায় চেতনার ঘরে। মার্চ আসে নানা মাত্রা নিয়ে। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে। আর দুদিন পরেই এ ভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী। “৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর অমর রচনা, বাঙালির মহাকাব্য। এ মহাকাব্য বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামের ধারা ও স্বাধীনতার লালিত স্বপ্ন থেকে উৎসারিত। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই এ মহাকাব্য রচনা সম্ভব ছিল।”
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ১৮ মিনিটের অনলবর্ষী ভাষণে ১১০৫টি শব্দের সমন্বয়ে এই মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। যে মহাকাব্যের মধ্যে নিহিত হয়েছে বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ভাষণের শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাসে তা হয়ে ওঠে গীতিময় ও শ্রবণের চতুর্দিকে অনুরণিত। যে কারণে মার্কিন ম্যাগাজিন Newsweek বঙ্গবন্ধুকে আখ্যা দিয়েছে ÔPoet of Politics’ হিসেবে। এদেশের কোটি জনতার বহু যুগের লালিত স্বপ্ন-ত্যাগ, তিতিক্ষা-আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল আমাদের এই মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষাভিত্তিক একমাত্র জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। হাজার বছরের সংগ্রাম শেষে যে রাষ্ট্রের বীজ রোপিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে।
১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি বিত্ত-বৈভবের বিভাজন নির্বিশেষে এক মহাঐক্যে জাগ্রত করেছিলেন মহাভাষণের মাধ্যমে। এই মহাভাষণের পটভূমি তিনিই তৈরি করেছিলেন তার দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ দীর্ঘ দুই দশকে তিনি যে অসংখ্যবার বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য জেলে গিয়েছেন, তা বাঙালি-মননে অগ্নিশিখার মতো কাজ করেছিল। ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল তার দীর্ঘ সংগ্রামের একটি পরিণত ফুল ও ফল। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রের প্রত্যাশা ছিল, সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন বঙ্গবন্ধু। জনসভায় রওনা দেবার আগে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা দীর্ঘক্ষণ তার পথ আগলে রেখে তাকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার জন্য কাকুতি-মিনতি জানিয়েছিল। কিন্তু তিনিতো জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি ভালো করেই জানতেন কসাই ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খান ওঁত পেতে ছিল ওই একটি ভ্রান্ত পদক্ষেপের জন্য। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে সে সুযোগ দেননি। উলটো ২৫ মার্চ অ্যাসেম্বলিতে যোগ দেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে চারটি দাবি উত্থাপন করলেন- (১) সামরিক আইন প্রত্যাহার (২) সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া (৩) সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং (৪) জনপ্রতিনিধিদের কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর। যে দাবিগুলো মানার সাধ্য ছিল না পাক সামরিক জান্তার।
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply