রাজশাহী প্রতিনিধি : স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় আবহমান কাল থেকেই আমাদের দেশে মাগুর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। অতিরিক্ত শ্বসন অংগ থাকায় মাগুর মাছ জলজ পরিবেশের বাইরেও অনেকক্ষন বেঁচে থাকতে পারে বিধায় জীবন্ত বাজারজাত করা যায় এবং বাজারমূল্যও তুলনামূুলক বেশী। রোগীর পথ্য হিসেবে এই মাছের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অতীতে প্রাকৃতিক উৎস্য হতে প্রচুর পরিমান মাগুর মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য কারণে মাগুর মাছের প্রজনন এবং বিচরণ ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় মাছটির প্রাকৃতিক প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে চাষের জন্য এই মাছটির গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির অল্প গভীরতা, অল্প অক্সিজেন এবং উচ্চ তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে সক্ষম বিধায় মৌসুমী পুকুর বা বসত বাড়ীর ছোট পুকুরে এই মাছ চাষের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষকরে খরাপ্রবণ এলাকার গৃহস্থালি পুকুরে মাগুর মাছের স্বল্পমেয়াদী চাষ সম্ভব। অল্প স্থানে অধিক ঘনত্ত্বে এই মাছ চাষের জন্য উচ্চ আমিষ সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন। চাষী পর্যায়ে একক ও মিশ্র উভয় ধরনেরই চাষ ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু সম্পূরক খাদ্য নির্ভর মাগুর মাছের একক চাষে প্রায়শঃ সন্তোষজনক উৎপাদন ও মুনাফা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। নিম্ন আয়ের পরিবারে উচ্চমানের পুষ্টি সরবরাহে মাগুর মাছ চাষের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিটির সম্প্রসারণও সঠিকভাবে হচ্ছে না। বসত ভিটার পুকুরে গ্রামীণ মহিলাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উচ্চ বাজার চাহিদা সম্পন্ন মাগুর মাছের টেকসই চাষ ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এইলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর আওতাভুক্ত এনএটিপি-২ প্রকল্পের সহযোগিতায় খরা প্রবণ এলাকা রাজশাহীতে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করে।
পি-এইচ ডি গবেষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই প্রযুক্তির প্রভাবে পুকুরের পানির ভৌত রাসায়নিক উপাদান সমূহ সহনশীল মাত্রার মধ্যে পাওয়া যায় এবং মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রযুক্তিটির কোন ক্ষতিকর প্রভাব নাই।
গবেষণা প্রকল্পের সহ: প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান মন্ডল বলেন, এই প্রযুক্তির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো: স্বল্প মেয়াদী চাষ ব্যবস্থাপনা; অল্প স্থানে অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়; জীবন্ত মাছ বাজারজাত করা যায়; উৎপাদিত মাছের বাজার চাহিদা বেশী; মহিলাদের অংশগ্রহণ ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক; পরিবারে পুষ্টিকর খাদ্য যোগানে সহায়ক; বসত ভিটার পুকুরের কার্যকরী ব্যবহার; স্বল্প ব্যয় ও অধিক মুনাফা; এবং পরিবেশ বান্ধব।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোহা: আখতার হোসেন বলেন, নারীর অংশগ্রহণে গৃহস্থালি পুকুরে পুষ্টি সমৃদ্ধ মাগুর মাছের উৎপাদন সম্ভব হয়েছে । উল্লেখ্য, আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামীণ দুস্থ পরিবারে পুষ্টি সমৃদ্ধ মাছ খাওয়ার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply