নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে দৈত্যাকৃতির ট্রলি (মাটি পরিবহনের গাড়ি) গাড়ির উৎপাতে অতিষ্ট জনসাধারন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে দাপিয়ে চলছে এই অবৈধ ট্রলি। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি এসব গাড়ির কারণে হরহামেশাই ঘটছে দূর্ঘটনা। গ্রামীণ রাস্তাঘাট দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন বৈধ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা করতে মাঠে নামলেও এসব গাড়ির বেপারে যেন উদাসীন। অবৈধ এসব যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলাটি মূলত ধলেশ্বরী, যমুনাসহ অসংখ্য ছোট-বড় নদী-খাল পরিবেষ্টিত এলাকা। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদ হওয়ায় এসব এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি। এখনো অধিকাংশ সড়ক কাঁচা বা আধাঁ পাঁকাকরণ হয়েছে। ফলে মানুষকে উপজেলা হয়ে জেলা শহর টাঙ্গাইলসহ ঢাকা যেতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। কোথাও, ভ্যান, কোথাও টেম্পু বা সিএনজি অথবা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাই একমাত্র পরিবহন। মালামাল পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এক সময় ঘোড়ার গাড়ি এই এলাকায় পণ্য বা মালামাল আনা নেওয়ার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন অনেকটা কমে গেছে। সেই স্থানে দখল করে নিয়েছে ট্রলি। চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগী ট্রাক্টরের হাল খুলে এই যন্ত্রটিকে এক শ্রেনীর মুনাফালোভী লোক অতিরিক্ত চাকা ও ট্রলি সংযোজন করে ট্রাক হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়া বাজার থেকে ডিজেল বা পেট্রোল ইঞ্জিন কিনে এনে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বডি দিয়ে বানানো হয় এই ট্রলিগুলো। এসব গাড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং কোন নকশা নেই। নেই কোন রোড পারমিট। ফলে এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। এসব গাড়ির চাকাগুলো ভারি এবং অতিরিক্ত মালামাল পরিবহণ করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব গাড়ির বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন ফায়দা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। আবার এসব গাড়ির সুবিধা ভোগ করায় অনেকে এই গাড়ির বিরোধীতা না করে পক্ষে সাফাই গেয়ে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলায় অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০টি এ ধরণের ট্রলি গাড়ি রয়েছে। একটি উপজেলায় এতগুলো গাড়ি নিয়মিত চলাচল করলে সড়কের ত্রাহি অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬ চাকা বিশিষ্ট দৈত্যাকৃতির যানটির চালকের কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও মুনাফা লোভীদের ছত্রছায়ায় সকল সড়কে ফ্রি-স্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দ্বারা চালানোর কারনে ঘটছে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা।
সম্প্রতি এই যানের সাথে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে পুঙ্গুত বরণ করেছেন কয়েকজন। মোকনা ইউনিয়নের আজাদ বলেন, “এই দানব আকৃতির যান রাস্তায় চলাচলের সময় রাস্তা কাঁপতে থাকে। পাঁকা রাস্তার বেহাল দশা করেছে এই দৈত্যাকৃতির ট্রলি। শীঘ্রই এই দৈত্যাকৃতির যান সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ না করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে।
মামুদনগর ইউনিয়নের সাইফুল মিয়া বলেন, এই ট্রলি দিয়ে সাধারণত মাটি পরিবহন বেশি করা হয়ে থাকে। গাড়ির মালিকরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী। তাই এদেরকে নিষেধ করলেও মানে না। মানুষের জান-মাল ও সড়ক অবকাঠামো ঠিক রাখতে চাইলে দ্রুতই এই যানটির চলাচল বন্ধ করা উচিত।
ধুবড়িয়া গ্রামের কালাম, পাভেল, বাবুসহ কয়েকজন বলেন, দিনে এবং রাতে চব্বিশ ঘন্টাই এই গাড়িগুলো চলাচল করে থাকে। ফলে ধূলা-বালির কারণে বাহিরে থাকা দায়। ঘরের আসবাবপত্রগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।
আব্দুর রশিদ নামে একজন ট্রলি চালক বলেন, আমি বেতনভুক্ত চালক। আমার নিজের গাড়ি নেই, কোন রেজিস্ট্রেশনও নেই। মানুষ তাদের মাটি, গাছসহ বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের কাজ করে দেই। এতে আমাদের চেয়ে তাদের উপকারই বেশি।
একই রকম কথা বললেন কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। তারা বলেন, এই প্রত্যন্ত উপজেলায় এই পরিবহনটি না থাকলে আমাদের পণ্য আনা-নেয়া কষ্টকর হতো। খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগতো।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত-ই-জাহান জানান, আইন শৃঙ্খলা মিটিংএ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সকাল ৮টা হতে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত কোন ট্রলি চলতে পারবে না। বালু পরিবহনের সময় ত্রিপল বা পর্দা ব্যবহার করতে হবে এবং হাইওয়েসহ অন্যান্য রাস্তায় গতিসীমা সর্বোচ্চ ৪০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে নাগরপুর উপজেলা ট্রাকটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. আনিসুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৩-২০৯২৮১) একাধিকবার চেষ্টার পর তিনি ফোন ধরলেও সংবাদকর্মীর পরিচয় দেওয়ার পর ফোন কেটে দেন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, যারা এ ধরণের গাড়ি চালায় তাদের অনেকেই অনভিজ্ঞ ও অপরিপক্ক। এদের মধ্যে ১০/১৫ বছরের কিশোর ছেলেও রয়েছে। তাদের কোন প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স থাকে না। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে প্রায়শই দূর্ঘটনা ঘটছে। বিআরটিএ’র আইন বাস্তবায়ন এবং সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে সকল ধরণের নসিমন, ভটভটি, ট্রাক্টর জাতীয় অবৈধ যানবাহন বাতিলের দাবি করেন তিনি।
নাগরপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরণের অনুমোদনহীন যানবাহন গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামোর জন্য খুবই ক্ষতিকর। স্থানীয়ভাবে যারা মাটির ব্যবসা করে কিংবা ইটভাটা আছে তারাই মূলত এসব যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। অথবা ক্ষমতাশীন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অনেকেই এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন এ ধরণের যানবাহন সীমিত করা বা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক মো. আবু নাঈম বলেন, এ ধরণের যানবাহনের কোন রোড পারমিট নেই। চালকরাও অনভিজ্ঞ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন। আমরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের গাড়িগুলো জব্দ করে জরিমানা করে থাকি।নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে দৈত্যাকৃতির ট্রলি (মাটি পরিবহনের গাড়ি) গাড়ির উৎপাতে অতিষ্ট জনসাধারন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে দাপিয়ে চলছে এই অবৈধ ট্রলি। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি এসব গাড়ির কারণে হরহামেশাই ঘটছে দূর্ঘটনা। গ্রামীণ রাস্তাÑঘাট দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন বৈধ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা করতে মাঠে নামলেও এসব গাড়ির বেপারে যেন উদাসীন। অবৈধ এসব যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলাটি মূলত ধলেশ্বরী, যমুনাসহ অসংখ্য ছোট-বড় নদী-খাল পরিবেষ্টিত এলাকা। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদ হওয়ায় এসব এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি। এখনো অধিকাংশ সড়ক কাঁচা বা আধাঁ পাঁকাকরণ হয়েছে। ফলে মানুষকে উপজেলা হয়ে জেলা শহর টাঙ্গাইলসহ ঢাকা যেতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। কোথাও, ভ্যান, কোথাও টেম্পু বা সিএনজি অথবা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাই একমাত্র পরিবহন। মালামাল পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এক সময় ঘোড়ার গাড়ি এই এলাকায় পণ্য বা মালামাল আনা নেওয়ার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন অনেকটা কমে গেছে। সেই স্থানে দখল করে নিয়েছে ট্রলি। চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগী ট্রাক্টরের হাল খুলে এই যন্ত্রটিকে এক শ্রেনীর মুনাফালোভী লোক অতিরিক্ত চাকা ও ট্রলি সংযোজন করে ট্রাক হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়া বাজার থেকে ডিজেল বা পেট্রোল ইঞ্জিন কিনে এনে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বডি দিয়ে বানানো হয় এই ট্রলিগুলো। এসব গাড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং কোন নকশা নেই। নেই কোন রোড পারমিট। ফলে এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। এসব গাড়ির চাকাগুলো ভারি এবং অতিরিক্ত মালামাল পরিবহণ করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব গাড়ির বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন ফায়দা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। আবার এসব গাড়ির সুবিধা ভোগ করায় অনেকে এই গাড়ির বিরোধীতা না করে পক্ষে সাফাই গেয়ে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলায় অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০টি এ ধরণের ট্রলি গাড়ি রয়েছে। একটি উপজেলায় এতগুলো গাড়ি নিয়মিত চলাচল করলে সড়কের ত্রাহি অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬ চাকা বিশিষ্ট দৈত্যাকৃতির যানটির চালকের কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও মুনাফা লোভীদের ছত্রছায়ায় সকল সড়কে ফ্রি-স্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দ্বারা চালানোর কারনে ঘটছে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা।
সম্প্রতি এই যানের সাথে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে পুঙ্গুত বরণ করেছেন কয়েকজন। মোকনা ইউনিয়নের আজাদ বলেন, “এই দানব আকৃতির যান রাস্তায় চলাচলের সময় রাস্তা কাঁপতে থাকে। পাঁকা রাস্তার বেহাল দশা করেছে এই দৈত্যাকৃতির ট্রলি। শীঘ্রই এই দৈত্যাকৃতির যান সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ না করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে।
মামুদনগর ইউনিয়নের সাইফুল মিয়া বলেন, এই ট্রলি দিয়ে সাধারণত মাটি পরিবহন বেশি করা হয়ে থাকে। গাড়ির মালিকরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী। তাই এদেরকে নিষেধ করলেও মানে না। মানুষের জান-মাল ও সড়ক অবকাঠামো ঠিক রাখতে চাইলে দ্রুতই এই যানটির চলাচল বন্ধ করা উচিত।
ধুবড়িয়া গ্রামের কালাম, পাভেল, বাবুসহ কয়েকজন বলেন, দিনে এবং রাতে চব্বিশ ঘন্টাই এই গাড়িগুলো চলাচল করে থাকে। ফলে ধূলা-বালির কারণে বাহিরে থাকা দায়। ঘরের আসবাবপত্রগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।
আব্দুর রশিদ নামে একজন ট্রলি চালক বলেন, আমি বেতনভুক্ত চালক। আমার নিজের গাড়ি নেই, কোন রেজিস্ট্রেশনও নেই। মানুষ তাদের মাটি, গাছসহ বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের কাজ করে দেই। এতে আমাদের চেয়ে তাদের উপকারই বেশি।
একই রকম কথা বললেন কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। তারা বলেন, এই প্রত্যন্ত উপজেলায় এই পরিবহনটি না থাকলে আমাদের পণ্য আনা-নেয়া কষ্টকর হতো। খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগতো।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত-ই-জাহান জানান, আইন শৃঙ্খলা মিটিংএ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সকাল ৮টা হতে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত কোন ট্রলি চলতে পারবে না। বালু পরিবহনের সময় ত্রিপল বা পর্দা ব্যবহার করতে হবে এবং হাইওয়েসহ অন্যান্য রাস্তায় গতিসীমা সর্বোচ্চ ৪০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে নাগরপুর উপজেলা ট্রাকটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. আনিসুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৩-২০৯২৮১) একাধিকবার চেষ্টার পর তিনি ফোন ধরলেও সংবাদকর্মীর পরিচয় দেওয়ার পর ফোন কেটে দেন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, যারা এ ধরণের গাড়ি চালায় তাদের অনেকেই অনভিজ্ঞ ও অপরিপক্ক। এদের মধ্যে ১০/১৫ বছরের কিশোর ছেলেও রয়েছে। তাদের কোন প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স থাকে না। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে প্রায়শই দূর্ঘটনা ঘটছে। বিআরটিএ’র আইন বাস্তবায়ন এবং সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে সকল ধরণের নসিমন, ভটভটি, ট্রাক্টর জাতীয় অবৈধ যানবাহন বাতিলের দাবি করেন তিনি।
নাগরপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরণের অনুমোদনহীন যানবাহন গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামোর জন্য খুবই ক্ষতিকর। স্থানীয়ভাবে যারা মাটির ব্যবসা করে কিংবা ইটভাটা আছে তারাই মূলত এসব যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। অথবা ক্ষমতাশীন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অনেকেই এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন এ ধরণের যানবাহন সীমিত করা বা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক মো. আবু নাঈম বলেন, এ ধরণের যানবাহনের কোন রোড পারমিট নেই। চালকরাও অনভিজ্ঞ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন। আমরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্য
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে দৈত্যাকৃতির ট্রলি (মাটি পরিবহনের গাড়ি) গাড়ির উৎপাতে অতিষ্ট জনসাধারন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে দাপিয়ে চলছে এই অবৈধ ট্রলি। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি এসব গাড়ির কারণে হরহামেশাই ঘটছে দূর্ঘটনা। গ্রামীণ রাস্তাÑঘাট দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন বৈধ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা করতে মাঠে নামলেও এসব গাড়ির বেপারে যেন উদাসীন। অবৈধ এসব যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলাটি মূলত ধলেশ্বরী, যমুনাসহ অসংখ্য ছোট-বড় নদী-খাল পরিবেষ্টিত এলাকা। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদ হওয়ায় এসব এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি। এখনো অধিকাংশ সড়ক কাঁচা বা আধাঁ পাঁকাকরণ হয়েছে। ফলে মানুষকে উপজেলা হয়ে জেলা শহর টাঙ্গাইলসহ ঢাকা যেতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। কোথাও, ভ্যান, কোথাও টেম্পু বা সিএনজি অথবা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাই একমাত্র পরিবহন। মালামাল পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এক সময় ঘোড়ার গাড়ি এই এলাকায় পণ্য বা মালামাল আনা নেওয়ার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন অনেকটা কমে গেছে। সেই স্থানে দখল করে নিয়েছে ট্রলি। চাষাবাদের কাজে ব্যবহার উপযোগী ট্রাক্টরের হাল খুলে এই যন্ত্রটিকে এক শ্রেনীর মুনাফালোভী লোক অতিরিক্ত চাকা ও ট্রলি সংযোজন করে ট্রাক হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়া বাজার থেকে ডিজেল বা পেট্রোল ইঞ্জিন কিনে এনে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বডি দিয়ে বানানো হয় এই ট্রলিগুলো। এসব গাড়ির ইঞ্জিনিয়ারিং কোন নকশা নেই। নেই কোন রোড পারমিট। ফলে এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। এসব গাড়ির চাকাগুলো ভারি এবং অতিরিক্ত মালামাল পরিবহণ করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব গাড়ির বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোন ফায়দা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। আবার এসব গাড়ির সুবিধা ভোগ করায় অনেকে এই গাড়ির বিরোধীতা না করে পক্ষে সাফাই গেয়ে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলায় অন্তত ৩৫০ থেকে ৪০০টি এ ধরণের ট্রলি গাড়ি রয়েছে। একটি উপজেলায় এতগুলো গাড়ি নিয়মিত চলাচল করলে সড়কের ত্রাহি অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৬ চাকা বিশিষ্ট দৈত্যাকৃতির যানটির চালকের কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও মুনাফা লোভীদের ছত্রছায়ায় সকল সড়কে ফ্রি-স্টাইলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক দ্বারা চালানোর কারনে ঘটছে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা।
সম্প্রতি এই যানের সাথে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে পুঙ্গুত বরণ করেছেন কয়েকজন। মোকনা ইউনিয়নের আজাদ বলেন, “এই দানব আকৃতির যান রাস্তায় চলাচলের সময় রাস্তা কাঁপতে থাকে। পাঁকা রাস্তার বেহাল দশা করেছে এই দৈত্যাকৃতির ট্রলি। শীঘ্রই এই দৈত্যাকৃতির যান সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ না করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে পড়বে।
মামুদনগর ইউনিয়নের সাইফুল মিয়া বলেন, এই ট্রলি দিয়ে সাধারণত মাটি পরিবহন বেশি করা হয়ে থাকে। গাড়ির মালিকরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী। তাই এদেরকে নিষেধ করলেও মানে না। মানুষের জান-মাল ও সড়ক অবকাঠামো ঠিক রাখতে চাইলে দ্রুতই এই যানটির চলাচল বন্ধ করা উচিত।
ধুবড়িয়া গ্রামের কালাম, পাভেল, বাবুসহ কয়েকজন বলেন, দিনে এবং রাতে চব্বিশ ঘন্টাই এই গাড়িগুলো চলাচল করে থাকে। ফলে ধূলা-বালির কারণে বাহিরে থাকা দায়। ঘরের আসবাবপত্রগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।
আব্দুর রশিদ নামে একজন ট্রলি চালক বলেন, আমি বেতনভুক্ত চালক। আমার নিজের গাড়ি নেই, কোন রেজিস্ট্রেশনও নেই। মানুষ তাদের মাটি, গাছসহ বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়ার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা টাকার বিনিময়ে তাদের কাজ করে দেই। এতে আমাদের চেয়ে তাদের উপকারই বেশি।
একই রকম কথা বললেন কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। তারা বলেন, এই প্রত্যন্ত উপজেলায় এই পরিবহনটি না থাকলে আমাদের পণ্য আনা-নেয়া কষ্টকর হতো। খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগতো।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত-ই-জাহান জানান, আইন শৃঙ্খলা মিটিংএ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সকাল ৮টা হতে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত কোন ট্রলি চলতে পারবে না। বালু পরিবহনের সময় ত্রিপল বা পর্দা ব্যবহার করতে হবে এবং হাইওয়েসহ অন্যান্য রাস্তায় গতিসীমা সর্বোচ্চ ৪০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে নাগরপুর উপজেলা ট্রাকটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. আনিসুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৩-২০৯২৮১) একাধিকবার চেষ্টার পর তিনি ফোন ধরলেও সংবাদকর্মীর পরিচয় দেওয়ার পর ফোন কেটে দেন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, যারা এ ধরণের গাড়ি চালায় তাদের অনেকেই অনভিজ্ঞ ও অপরিপক্ক। এদের মধ্যে ১০/১৫ বছরের কিশোর ছেলেও রয়েছে। তাদের কোন প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স থাকে না। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারনে প্রায়শই দূর্ঘটনা ঘটছে। বিআরটিএ’র আইন বাস্তবায়ন এবং সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে সকল ধরণের নসিমন, ভটভটি, ট্রাক্টর জাতীয় অবৈধ যানবাহন বাতিলের দাবি করেন তিনি।
নাগরপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরণের অনুমোদনহীন যানবাহন গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামোর জন্য খুবই ক্ষতিকর। স্থানীয়ভাবে যারা মাটির ব্যবসা করে কিংবা ইটভাটা আছে তারাই মূলত এসব যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। অথবা ক্ষমতাশীন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অনেকেই এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন এ ধরণের যানবাহন সীমিত করা বা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক মো. আবু নাঈম বলেন, এ ধরণের যানবাহনের কোন রোড পারমিট নেই। চালকরাও অনভিজ্ঞ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন। আমরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের গাড়িগুলো জব্দ করে জরিমানা করে থাকি।
Leave a Reply