হাকিকুল ইসলাম খোকন ,সিনিয়র প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জে মামলার দায়িত্ব পাওয়ার ৩ মাসের মাথায় উদঘাটিত হলো সানজিদ(১৬) অপহরনের পর হত্যার মূল রহস্য। ঘাতক শরিফ মন্ডল (২২) পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে।
জেলার শ্রীনগরের জনৈক স্বপন মিয়ার গ্যারেজ হতে প্রতিদিনের ন্যায় বিগত ২২শে আগষ্ট ২০২০ তারিখ সকালে অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে চালক সানজিদ। কিন্ত দুপুর গড়িয়ে সন্ধা হয় এরপর রাতেও সানজিদ বাড়িতে না ফেরায় চারিদকে খুজতে থাকে তার স্বজনেরা। পরের দিন ২৩ আগস্ট শ্রীনগর থানায় নিখোজ সানজিদের মা আখি আক্তার এটি সাধারন ডায়েরী করেন। জিডিবলে শ্রীনগর থানা পুলিশ ভিকটিম ও তার সাথে থাকা বেটারী চালিত ইজিবাইক (মিশুক) সন্ধানে নামে। এক পর্যায়ে জিডির বাদী আখি আক্তারের ভগ্নীপতি মনিরের তথ্যমতে ১১অক্টোবর রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ এলাকা থেকে সানজিদের ইজিবাইকটিসহ আব্বাসকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে শ্রীনগর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ইজিবাইকটিকে তার আত্মীয় শরিফ মন্ডল তাকে এটা চালানোর জন্য দিয়েছে। এ সময় শরিফ মন্ডলের ঠিকানা জানতে চাইলেও সে জানাতে ব্যার্থ হয় পরে থানায় আব্বাস ও শরীফ মন্ডলের বিরুদ্ধে আখি আক্তার বাদী হয়ে অপহরনের নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। এরপর ভিকটিম সানজিদকে ও অপহরনকারী শরীফ মন্ডলকে মরিয়া হয়ে খুজতে থাকে পুলিশ।
এ বছরের ২০ জানুয়ারী পুলিশ হেডকোয়াটার মামলাটি তন্তের দায়িত্বভার মুন্সীগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে প্রদান করে। পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শরীফ মন্ডলকে নানাভাবে খুজা খুজি শুরু করে। এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জের সোনারগাও থানার মেঘনাঘাট এলাকা থেকে শরীফ মন্ডলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই মুন্সীগঞ্জ। পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, তিন মাস পূর্বে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই এরপর থেকে এই মামলার মূল আসামী শরীফ মন্ডলকে গ্রেফতার করতে নানান কৌশল অবল্বন করতে হয়। অবশেষে শরীফকে ধৃত করার পর তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনার সাথে জড়িত এবং ভিকটিম সানজিদকে ইজিবাইকসহ অপহরন ও ভিকটিমকে হত্যার লোমহর্শক ঘটনা প্রদান করে আদালতে স্বিকারোক্তি দেয়।
শরীফ ও তার সহোযোগিরা একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে শ্রীনগর থেকে বেশী ভাড়ায় অটোসহ নবাবগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এরপর নবাবগঞ্জ থানার সোনা হাজরা গ্রামের টিকারপুর বাইপাস সড়কের পাশে জনৈক ইস্রাফিল মিয়ার জমিতে নিতে সানজিদকে হত্যা করে ইজিবাইটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক শরীফের দেখানো মতে ভিকটিম সানজিদের মৃতদেহের মাথার খুলি,চোয়ালের দাত,এবং সানজিদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের ৩৭টি হাড় এবং আকাশি রংয়ের অর্ধ পচা জিন্সের প্যান্ট,কালো রংয়ের রাবারের বেল্ট জব্দ করে পিবিআই কর্মকর্তারা। এরপর মৃতের হাড় ঢাকাস্থ স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজে পরিক্ষার জন্য প্রেরন করা হয়। নিহত সানজিদ জেলার শ্রীনগর উপজেলার পূর্ববাড়ৈখালী গ্রামের রিপন শেকের ছেলে।
এদিকে রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ থানার দৌলদিয়া গ্রামের ফজলু মন্ডলের ছেলে ঘাতক শরীফ মন্ডল ও একই এলাকার মো: সিদ্দিক শেখের ছেলে আব্বাস শেখ মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দির্ঘদি যাবৎ ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ছিনতাই করে আসছিল বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। বাকী আসামিদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার পিবিআই পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক ।
You cannot copy content of this page