সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬০ রানের বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচ সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রান।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ১২২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। চার ম্যাচ অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলা বাংলাদেশ অবশেষে এনেছে দুটি পরিবর্তন। শামীম হোসেনের জায়গায় দলে এসেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। শরীফুল ইসলামের বদলে খেলবেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
খেলায় মিলিত চেষ্টায় লড়াই করার মতো একটা সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। সেটাতে যথেষ্টর বেশি বলে প্রমাণ করলেন বোলাররা। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে গিয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারীরা। ব্যাট-বলে-ফিল্ডিংয়ে নিজেদের মেলে ধরে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
এদিন, দারুণভাবে কামব্যাক করেছেন সাকিব আল হাসান। মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট। বোলিংয়ের নির্ধারিত কোটাও তিনি পূরণ করেননি। ৩.৪ ওভারের মধ্যে একটি মেডেনও দিয়েছেন। এটিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
এছাড়া সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চিনিয়েছেন অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। মাত্র ৩ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়েই নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট। দারুণ বোলিং করেছেন নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসানও। এর মধ্যে নাসুম নিয়েছেন অজিদের প্রথম দুটি উইকেট। তবে উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত ছিলেন মেহেদী। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও নেন একটি উইকেট।
অজি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড। এছাড়া ১৭ রান করেন বেন ম্যাকডারমট। বাকিদের মধ্যে আর কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলে থেকেছেন।
ওপেনিংয়ে নামেন মোহাম্মদ নাইম শেখ ও মেহেদী হাসান। দু’জনে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন। প্রথম চার ওভারেই দলীয় রান ৪০ পার হয়ে হয়ে যায়। ৪.৩ ওভারে দলীয় ৪৩ রানের মাথায় অ্যাশটন টার্নারের বলে অ্যাগারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৩ রান করে ফিরে যান মেহেদী হাসান।
পরে ওয়ানডাউনে সাকিব নামলেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। আগের ম্যাচের মতোই পিচে স্ট্রাগল করতে থাকেন। দলীয় ৬০ রানের মাথায় ২০ বলে ১১ রান করে ফিরে যান তিনি। তার আগে ২৩ বলে ২৩ রান করে আউট হন অপর ওপেনার নাইম শেখ। এরপর ক্রিজে আসেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন হলেও তার ফর্ম আগের মতো রয়ে যায়। ১৬ রান করে আউট হয়ে যান।
এছাড়া অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেন ১৯ ও আফিফ হোসেন ১০। বাকিদের মধ্যে আর কেউ বলার মতো স্কোর করতে পারেননি। শেষদিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অজি বোলাররা। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা।
১২৩ রানে লক্ষ্য টপকাতে নেমে শুরু থেকেই দিশেহারা অজিরা। শুরুটা হয় ওপেনার ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের উইকেট দিয়ে।
অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে সফরকারীদের ইনিংস শুরু করেন তিনি। তাকে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের ফেরান বাঁহাতি স্পিনার নাসুম। অফ সাইডে নাসুমের শর্ট লেন্থের বল দ্রুত খেলতে চেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান। ভাগ্য সহায় হয়নি তার, বল ব্যাট মিস আঘাত হানে স্টাম্পে। নিজের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান নাসুম। ৩ বলে ৩ রান করে আউট হন স্ক্রিস্টিয়ান।
সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশি বোলারদের মূর্তিমান আতঙ্ক বনে গেছেন মিচেল মার্শ। তাকেও দ্রু নিজের শিকারে পরিণত করেন নাসুম। নিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলে ৪ রানে থাকা মার্শকে আউট করেন তিনি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম ওভার বল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। এসেই বাজিমাত এই বাঁহাতি স্পিনারের। নিজের দ্বিতীয় বলে বোল্ড করেন ওয়েডকে।
পরে বল হাতে সফলতা পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাকডরমটকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান তিনি। এরপরের ব্যাটসম্যানরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। পরের ৬ উইকেটের ৩টি দখল করেন সাকিব। বাকি ৩টি নেন একাদশে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তুলে নেন অ্যালেক্স ক্যারি (৩) ও ময়সেস হেনরিকসকে (৩)। স্লোয়ারে বোল্ড ক্যারি, খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হেনরিকস। নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে উইকেট মেইডেন সাকিবের।
অ্যাশটন টার্নারকে (১) ফেরান কাভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচে পরিণত করে। আর তাতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন টাইগার অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিবই ১ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা একমাত্র ক্রিকেটার। পরে সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ৬২ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ জয় পায় ৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়ার আগের সর্বনিম্ন রানের বাজে রেকর্ডটি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৫ সালে সাউদাম্পটনে। সেবার ৭৯ রান করতে পেরেছিল তারা। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে এটি ১৭তম সর্বনিম্ন রানের স্কোর।
Leave a Reply