চিত্রা নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে লাখো উৎসুক জনতা। আশ্বিনের কাঠফাটা রোদে দুপুরে এমনিতেই দরদর করে ঘাম ঝরছিল। বাইচ শুরু হবার কথা ছিল দুপুর আড়াইটায়। কিন্তু বিকেল ৩টা বেজে গেলেও নৌকাবাইচের দেখা নেই। তবে উৎসবে অংশ নেওয়া সুলতানভক্তদের উৎসাহের কোনো কমতি ছিল না। এক পর্যায়ে পুরুষ ও নারী বাইচদের ছোট-বড় ১৪টি নৌকা দেখে উল¬াসে মেতে ওঠে সবাই। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতু থেকে শুরু হয়ে এস এম সুলতান সেতুতে গিয়ে শেষ হয়। নৌকাবাইচ, আর্টক্যাম্পে অংশ নেওয়া শিল্পীদের চিত্র প্রদর্শনী, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে দারুণ সময় কাটিয়েছেন সুলতানভক্তরা।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) জমিদারদের রেখে যাওয়া বাধাঘাট চত্বরে দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং জেলা প্রশাসন। আয়োজনের মুল উৎস বিশ্ব পর্যটন দিবস এস এম সুলতান নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। সুলতানের প্রতি ভালোবাসা আর উচ্ছাসে মুগ্ধ হয়ে যশোর জেলা থেকে আর্টক্যাম্পে অংশ নিতে আসা চিত্রশিল্পী সোহেল প্রাণন বলেন, প্রচন্ড খরতাপেও সুলতানের প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না ভক্তদের। প্রাণের গুরুজির অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। প্রান্তিক এলাকায় এমন আনন্দ-উল¬াল দেখিনি কোথাও।
নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা শেষে বাধাঘাট চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী এমপি। জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তজা, সরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহম্মেদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন (এনডিসি), নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস বোস, জেলা আওয়ামী লীগৈর সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দীন খান নিলু, নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা। স্বাগত বক্তব্যদেন সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব, বাংলাদেশ অলিম্পক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান মিকু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী এমপি বলেন, ‘শিল্পী সুলতান ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। পেশিবহুল সুস্থ্য সবল গ্রামীণ জনপদের কৃষকের চিত্র তাঁর তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠতো। একটি কঠিন বিষয়কে তিনি অতি সহজেই এঁকে দিতে পারতেন। দেশের প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠুক সুলতানের মতো শিল্পী। তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের ভালোবাসতেন বলেই তিনি শিশুস্বর্গ কমপে¬ক্স গড়ে তোলেন। এ প্রজন্মের শিল্পীদের তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার আহবান জানান।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মাশরাফি বলেন, ‘একটি বিন্দু থেকেই ছবির উৎপত্তি শুরু হয়। সে যে কোন ছবিই হোক না কেন। সুলতান ছিলেন বিশ্বখ্যাত শিল্পী। অকৃতদার এই মানুষটির দুই পকেটে থাকতো সাপ আর বেজি। তাঁর সামনে সাপ, বেজি, বিড়াল, কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণী বসে থাকলেও কেউ কারোর ওপর আক্রমণ করতো না। আধ্যাত্মিক জগতের এই মানুষটির পক্ষেই এটা সম্ভব ছিল।’
তিনি আরও বলেন, শিল্পী সুলতানের আত্মা ছিল সৎ। উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। সৃষ্টিশীল এই মানুষটি এখন আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ আর শিক্ষনীয় কর্মচিত্র আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। এ প্রজন্মকে তাঁর পথচলা অনুসরণ করার আহবান জানান।
এর আগে নড়াইল সার্কিট হাইসে অতিথিবৃন্দ পৌছালে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পরে অতিথিরা এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় কালাই গ্রুপের (বড় নৌকা) প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন মাগুরা সদরের খানবাড়িয়া গ্রামের জহুর মোল্যার আল্লার দান মাগুরা টাইগারস। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন পাবানার মুক্তনগর এলাকার হাফিজুর রহমানের শাপলা এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর ধুসরাইল গ্রামের আতর আলীর মায়ের দোয়া নৌকা। টালাই গ্রুপের (ছোট নৌকা) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঘোষগাতি গ্রামের আলকাচ শেখের সোনার বাংলা প্রথম, খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারহাজি গ্রামের সাইফুল সিকদারের রকেট দ্বিতীয় এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া জোয়ারিয়া গ্রামের নিকুঞ্জ কুমার মন্ডলের মা শিতলা ।#
মো জান্নাতুল বিশ্বাস/নড়াইল/প্রতিদিনের সময়
You cannot copy content of this page