ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়ে চরম ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উচিৎ ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করা এবং ক্ষমতা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করা।
রবিবার সকাল ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা অনেক রকম কথা বলেন। ঠাকুরগাঁওয়ে এসেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন- দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির পেছনে বিএনপি জড়িত এবং আমার নাম সহই বলেছেন। আমি নিজে কখনও কোন ব্যবসা করিনাই, আমি একজন শিক্ষক ছিলাম। এখনও যদি বিএনপি এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের আছেন কেন? তাহলে আওয়ামী লীগের উচিৎ পদত্যাগ করা এবং ক্ষমতা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করা।
তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা এ ধরনের কথাবার্তা বলে তারা এই সমস্যাটাকে আরও একটা হাস্যকর অবস্থায় নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছে। আমি মনে করি- জনগণের প্রতি এই সরকার তামাশা করছে। যেখানে মানুষের নাবিম্বাস উঠেছে, খেতে পারছে না; মানুষ চাল, ডাল, লবণ কিনতে পারছে না, সে জায়গায় তারা আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো নিয়ে হাস্যকর কথা, উদ্ভট কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে যে সমস্যা গোটা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে এবং বিস্ফোরণের মত একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষরা অসহায় হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সরকারের উদাসীনতা এবং সরকারের চরম ব্যর্থতা এরজন্য দায়ী।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সমস্যাটা হচ্ছে- এই সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, যেহেতু জনগণের প্রতি তাদের কোন দায়বন্ধতা নেই; সেই কারণেই তারা এসব কথা বলার সাহস করে। মানুষের সাথে মশকারি করা এটা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টিকে আছে কি করে জানেন- সরকার টিকে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। তারা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে। বিচার বিভাগকে তারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে; আইনশৃঙ্খলার সমস্ত বাহিনীগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে, প্রশাসনকে তারা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
আজকে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে যে সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে সে সমস্যাটা হচ্ছে যে- আজকে ভিন্ন মত যারা প্রশন করছে, বিরোধীদল যারা করছেন, যারা জনগণের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করছেন তাদেরকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তারজন্য যত নিয়ন্ত্রক আইন তারা তৈরি করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবাদকর্মীরা যেন কথা বলতে না পারেন, লিখতে যেন না পারেন সেজন্য সরকার অনেকগুলো আইন তৈরি করেছে। বিশেষ করে সামাজিক সোশ্যাল মাধ্যম যেটা আমরা বলছি- এই মিডিয়া যেন কখনও ইফেকটিভ ওয়েতে কাজ করতে না পারে তারজন্য তারা অনেকগুলো আইন তৈরি করেছে। তারমধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০ মত সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। ইতোমধ্যে ২০০ সংবাদকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
সরকারের নতুন একটি খসড়া আইন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যে নতুন খসড়া নীতিমালা সরকার দিয়েছে সে নীতিমালাটা কি- সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে আপনার-আমার, সাধারণ মানুষের যে কথা; আমরা টেলিফোনে যে কথা বলি সেটাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে- সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। আরেকটি বড় বিষয় রয়েছে আপনারা দেখবেন যারা হোয়াটস অ্যাপে কথা বলে সেটাতে বলা আছে- কেউ এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, শুনতে পারবে না এবং জানতেও পারবে না। সরকার যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে সরকার সেটাকেও শুনতে পারবে এবং সেটার প্রচারও বন্ধ করতে পারবে।
এতে বোঝা যায় পুরোপুরিভাবে বাক স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করা, মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করা, আমাদের যে সাংবিধানিক অধিকার আছে- কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা; এখন সেটাকে তারা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার নীতিমালা করতে যাচ্ছে। যেটা আমরা মনে করি এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার যে মূল্যবোধ সেটাকে তারা ধ্বংস করছে। সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে; জনগণের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সুতরাং এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না, আমরা অবিলম্বে এই নীতিমালাকে বাতিল করতে বলেছি, সেই সাথে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করার জন্য আমরা বলেছি।
এই নীতিমালা নিয়ে বিএনপি কোন ধরনের প্রদক্ষেপ নিবে কিনা এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করছি। যদি এই খসড়াটাকে গ্রহণ করে তাহলে তখন আমরা এ নিয়ে কর্মসূচি দিবো।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যে আগ্রাসন এটাকে আমরা নিন্দা করেছি। আমরা মনে করি- ইউএন চার্টার অনুযায়ী কোন দেশেরই সার্বভৌমত্ব ও তার নিজস্ব যে স্বাধীনতা এবং অন্য দেশের আগ্রাসন এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। সেটা যে কারণেই হোক আগ্রাসন একটা স্বাধীন দেশকে এটা সাংঘাতিকভাবে ইউএন চার্টারকে লঙ্ঘন করা। সেই সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। তবে আমরা এটা অবশ্যই মনে করি- যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ কখনই সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা, অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নেয়া উচিৎ সকলকে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কোন ধরনের ইফেকটিভ স্টেটমেন্ট দিতে পারেনি বা তার কোন অবস্থান নিতে পারেনি। দুঃখজনকভাবে এই সরকার সবসময় একটা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ফলো করছে।
আপনারা দেখেছেন- এই যে রোহিঙ্গা ইস্যু এটা সম্ভবত পাঁচবছর হলো, পাঁচবছর ধরে রোহিঙ্গারা আজকে বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে আছে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের উপরে। তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত কোন ইফেকটিভ ব্যবস্থা নিতে পারে নাই। সেই সাথে যারা সমস্যা তৈরি করছে তাদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেনি এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটা তীব্র নিন্দা একটা ভাষা ব্যবহার করতে পারেনি এই সরকার।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কোন কথা বলতে চাইনা, কারণ এই নির্বাচন কমিশন আমরা মানিনা।
এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনসহ বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
You cannot copy content of this page