রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীতে চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাস জুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল হাসপাতালের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত এবং চিফ মেডিকেল অফিসার সহ জড়িত সিন্ডিকেটের বিষয় । এরই মধ্যে দেশের প্রথম শ্রেনীর তিনটি পত্রিকা-সহ অর্ধ শতাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ। কিন্তু উর্ধতন কর্তপক্ষ ও চুরিদারির সাথে সরাসরি জড়িতদের প্রধান যোগসূত্রকারী চিফ মেডিকেল অফিসের হেড ক্লার্ক আশরাফ আলী রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে ! তাহলে কি আশরাফের দূর্ণীতি প্রকাশ্যে আসবে না ? এরকমই মন্তব্য করছেন রেলের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা !
জানা যায়, ঠিকাদারি কাজে মালামাল গ্রহণ না করে চালানে স্বাক্ষর, মোট বিলের শতকরা ৩৫ ভাগ কমিশন গ্রহণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে চাহিদাপত্র তৈরি করে ২ কোটি টাকার বেশি লোপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলের হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ওষুধ চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও কর্মচারীরা আছেন বহাল তবিয়তে। ওষুধ কেনার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানি থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশন।
হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাতেও হচ্ছে নয়-ছয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. সুজিৎ কুমার রায় এ বছর অবসরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তার কয়েক কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা। ডা. সুজিৎ কুমার রায় পাকশী ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন।
সিএমও হিসেবে যোগদানের পর তিনি স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের শূন্যপদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। এ সময় লালমনিরহাট, পাকশী ও রাজশাহীর শুধু স্যানিটারি বিভাগ থেকেই এ চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৬ কোটি টাকা। জানা যায়, পাকশী ডিভিশনে পাঁচটি স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদ আছে। পাঁচ পদের মধ্যে একজন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আছেন।
এ ছাড়া অন্য চারটিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেওয়া আছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। এরা হলেন রাজশাহীতে জুয়েল সরকার, ঈশ্বরদীতে আকরাম, খুলনায় অয়ন সরকার ও পাকশীতে জগবন্ধু বিশ্বাস- যারা সবাই স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কর্মরত। এরা ডা. সুজিতের আস্থাভাজন। ডা. সুজিত যখন পাকশীর ডিএমও ছিলেন, তখন থেকেই বর্তমানে পাকশীর স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জগবন্ধু বিশ্বাস তার আস্থাভাজন। সেই সুবাদে গত দুই বছরে ২ কোটি টাকার ওপরে মালামালের চাহিদা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকে।যদিও চাহিদাপত্রে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না। তবুও জগবন্ধু তাতে স্বাক্ষর করেছেন। মালামাল কেনা না হলেও শুধু হাতবদল হয়েছে টাকার। স্টোরে খাতা-কলম ঠিক থাকলেও মালামাল নেই স্টোরগুলোতে। পাকশী ডিভিশনে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করা অন্য কেউই এমন মালামাল না কিনলেও শুধু পাকশীর দায়িত্বে থাকা জগবন্ধু বিশ্বাস মালামাল কিনেছেন ২ কোটি টাকার। লালমনিরহাট ডিভিশনে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সারাফাত। তিনি একাই গত কয়েক বছরে ৩০-৩৫ কোটি টাকার মালামাল কিনেছেন। সেখানেও সিএমও সুজিৎ কুমার রায় ৩৫ ভাগ কমিশন নিয়েছেন। এ ছাড়া সিএমও রাজশাহী দফতরে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে করেছেন কয়েক কোটি টাকার কাজ। ৫ লাখ টাকার চাহিদাপত্রের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা কমিশন ও মালামাল গ্রহণ না করেই ৩৫ ভাগ কমিশন নিয়েছেন তিনি। চলতি বছর ৪ এপ্রিল জগবন্ধুর চাহিদাপত্রের বিপরীতে পাকশী ডিভিশনের ডিএমও ডা. শাকিল আহমেদ চারটি চাহিদাপত্র প্রদান করেন।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চত করেন, সিএমও, ঠিকাদার, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, ওষুধ কোম্পানী’র এ সিন্ডকেট এর আন্তঃ যোগাযোগ গুলো করেন হেড ক্লার্ক আশরাফ। এই সিন্ডিকেটের কারো সাথে কারো সরাসরি যোগাযোগ হয় না ; সিন্ডিকেটের সবার সাথে সবার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছেন এই আশরাফ। রেলের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রাঘব বোয়াদের সাথেও রয়েছে এই আশরাফের জোরালো সম্পর্ক।
অফিসে না পেয়ে একাধিকবার হেড ক্লার্ক আশরাফের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply