রাজশাহী প্রতিনিধি : বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে (আরএনবি) সিপাহি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা চলমান অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযুক্ত এক কর্মকর্তাকে 'অভিযুক্ত নয়' ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন। সেই ক্লিয়ারেন্সে তিনি পেলেন পদোন্নতি আবার পদন্নোতির কয়েক মাস পরেই আরও একধাপ ওপরের পদে তাকে দেয়া হলো চলতি দায়িত্বও !
অনুসন্ধানকালেই দুদকের পক্ষ থেকে
ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর রেলপথ
মন্ত্রণালয় সহকারী কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে পদোন্নতি দিয়ে কমান্ড্যান্ট করা হয়। অথচ ১৮৫ জন সিপাহি নিয়োগে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট।
২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি রেলপথ
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সহকারী কমান্ড্যান্ট
থেকে পদোন্নতি দেন। এরপর তিনি
চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী যোগ দেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট আশাবুলসহ
পাঁচজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা
করে দুদক। ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন আশাবুল। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— নিয়োগ কমিটির সদস্য ও
আরএনবির পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, সাবেক কমান্ড্যান্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফুয়াদ হাসান পরাগ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক এসপিও সিরাজ উল্যাহ এবং রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহামেদ।
এছাড়া পূর্বাঞ্চলের আরএনবির সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেন মারা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়নি। দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন উপপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক। মামলায় বলা হয়, ১৮৫ জন সিপাহি নিয়োগের সময় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে বিশেষ কোটার প্রার্থী যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটার প্রার্থীদের পাশের কাছাকাছি নম্বর দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ দেখিয়ে চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়া বিভাগীয় কোটা, জেলা কোটা, পোষ্য কোটাসহ অন্যসব কোটা বিধি অনুযায়ী প্রতিপালন না করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ সময় রেলের বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। তাদের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ আছে কি না, তা জানতে
চাওয়া হলে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত রেলের ২০ জন কর্মকর্তার ব্যাপারে ক্লিয়ারেন্স দেন।
এ তালিকার এক নম্বরে ছিল অভিযুক্ত আশাবুলের নাম। দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ২০ কর্মকর্তার ব্যাপারে দুর্নীতিবিষয়ক কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। এ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর পদোন্নতি পেয়ে যান আশাবুল। অভিযোগ
অনুসন্ধানকালেও আশাবুলকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার বিষয়ে দুদকের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি।
দুদক রাজশাহীর সহকারি পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ক্লিয়ারেন্স এর ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই। আবার মন্তব্য করতেও পারবোনা কারণ এটি ঢাকা থেকে হয়েছে। এটি আসল না নকল তাও আমার নির্নয় করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে চিফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম বলেন, নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপারে প্রথমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগই আসেনি। শুধু সাক্ষী হিসাবে দুদক আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। তাই দুদক আমাকে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। কিন্তু পরে দুদক কীভাবে কী পেয়েছে জানি না, আমাকেও আসামি করেছে। আদালত থেকে আমি জামিন নিয়েছি। অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ছিলাম। মূল অভিযোগটা ছিল রেলের পূর্বাঞ্চলের সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি মারা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়নি। আমার জানামতে ওই নিয়োগে অনিয়ম হয়নি।