ইতালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল বলেন, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বাঙালির জাতিসত্তায় যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, তা ছিল এক অবিনাশী চেতনা। এই চেতনার পথ ধরে ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচন এবং ১৯৭১-এ আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই গর্বের একুশ হয়েছে আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার মর্যাদারক্ষার স্মৃতি চিহ্নিত এই দিনটি সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। জাতিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনগণের অস্তিত্ব ও ভাগ্যকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল কৃত্রিম ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে। সে সময় পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলা হলেও সংখ্যালঘিষ্ঠদের মুখের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঠিক তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব বাংলার দামাল ছেলেরা। ভাষার প্রতি বাঙালির চিরঞ্জিব ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে জোরালো হয়ে ওঠে বাংলা ভাষার মর্যাদা আদায়ের দাবি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির এই বৈষম্য আর অপমানের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম সরব জবাব। একুশে ফেব্রুয়ারির যে-আন্দোলন তা দৃশ্যত ভাষার আন্দোলন হলেও- তা ছিলো বাঙালির সামগ্রিক মুক্তির আন্দোলন। আর এটিই ছিলো আমাদের জাতীয় ইতিহাসে প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন।
You cannot copy content of this page