শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী: ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কেউ কলাপাতা মাথায় দিয়ে যাচ্ছেন, বাতাসে আবার কারও ছাতা উড়ে যাচ্ছে—এমন বর্ষণমুখর দিনের ছবি এঁকেছে নওগাঁর দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জুলকার নাইন আহামেদ। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শিরোনামে একটি মিছিলের ছবি এঁকেছে সিলেটের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইতি তালুকদার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে মিছিলে গুলির দৃশ্য এঁকেছে হবিগঞ্জের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী অরুন্ধতী দে চৌধুরী। জাতীয় পতাকা নিয়ে ছবি এঁকেছে পাবনার শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাত। এমন বাছাই করা ১০০টি ছবি নিয়ে রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় জাতীয় শিশু চিত্রকলা প্রদর্শনী।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির উদ্যোগে রাজশাহী শিশু একাডেমির মুক্তমঞ্চে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় শিশু একাডেমির নিজস্ব মিলনায়তনে। এবার স্লোগান ‘শিশুরা থাকুক হাসিতে, শিশুরা থাকুক খুশিতে’। সারা দেশের অংশগ্রহণকারীদের আঁকা ছবির মধ্য থেকে বাছাই করা সেরা নির্বাচিত ছবি দিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীতে শিশুদের আঁকা ১৫টি সেরা বিজয়ী ছবি ও ৮৫টি নির্বাচিত ছবি স্থান পায়। ছবিগুলোর মধ্যে গ্রাম, নদী, ফসলের মাঠ, ফুল, পাখি, পরিবার, বিজ্ঞান, শিক্ষা, ধর্মীয় উৎসব,বিয়েবাড়ি, পয়লা বৈশাখ, গ্রামীণ মেলা, ঝড়বৃষ্টি,
হাটবাজার, গ্রামীণ খেলাধুলা, মহান মুক্তিযুদ্ধ,ভাষাশহীদ, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, বীরশ্রেষ্ঠ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ ইত্যাদি বিষয়ের প্রাধান্য ছিল।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান অলীউল আলম ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম। বক্তব্য দেন শিশু একাডেমি ঢাকার প্রকল্প কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বানু ও সেরা বিজয়ী শিশুদের একজন সিরাজগঞ্জের মুশফিয়াত মাহাদিয়াত সদ্যশী। স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহীর জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মনজুর কাদের।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমাদের শিশুরা কত ভালো আঁকে, কত ভালো চিন্তা করে, তাদের মনের আকাশে কী বিচরণ করে, ছবিতেই তার অসাধারণ প্রতিফলন দেখতে পেয়েছি। শিশুরা এত সুন্দর ছবি আঁকে, আমি মুগ্ধ হয়েছি। আজ যা দেখলাম, এটি নতুন পৃথিবী, বর্ণিলভাবে আগামী বিশ্বকে উপস্থাপন করেছে তারা।’
অলীউল আলম বলেন, ‘দেখব সোনার বাংলাদেশ, সব আঁকিবুকির মাঝেই যেন আমার মা থাকে, খেটে খাওয়া বাবা থাকে, দেশ থাকে, দেশের স্বাধীনতা থাকে।’
মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘ছবি নিজেই কথা বলে। আমাদের ছোট্ট সোনামণিরা যে এত সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছে, আমরা বিমোহিত ও বিমুগ্ধ। এগুলোই আগামী স্মার্ট বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত এখন আমাদের সামনে। আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার।’
আলোচনা সভা শেষে শিশু একাডেমি রাজশাহীর প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
Like this:
Like Loading...
Leave a Reply