ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম ও যত্রতত্র ঘুষ গ্রহণ, কর্মকর্তা কর্মাচরীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে নতুন নয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন ও শৃঙ্খলা শাখায় কর্মরত মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস এর প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীপরিষদ সবিচালয়ের রয়েছে বিরূপ ধারণা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশির্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা প্রায় ৯ বছর যাবৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস একই পদে এই মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতিবিহীনভাবে রয়েছেন নয় বছর। কেননা, তাঁর নামে রয়েছে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। বর্তমানেও ঐ পদে বহাল থেকে অব্যাহত রেখেছেন তার নানা ধরণের অনিয়ম ও দুুর্ণীতি।
সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি ২০১৫ সালে ঠাকুরগাঁও এর ডিসি থাকাকালে জেলায় নানা দুর্নীতি ও ঘুষের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর ঘুষগ্রহণের অন্যতম সহযোগী তাঁর স্ত্রী বিউটি বিশ্বাস। ভূমি অফিসের তহশীলদার, অবৈধ ইটভাটা ব্যবসায়ীদের অনুমোদন, হাট-ঘাট জলাশয় বন্দোবস্ত এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গ্রহণ করতেন মোটা অঙ্কের উৎকোচ। এই বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ সবিচালয় ও জনপ্রশাসন সচিবালয় থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্তে এইসব তথ্য প্রমাণিত হয়। এরপরেও তিনি একসময় রাজউক এর কর্মকর্তা থাকাকালে ঢাকায় নিজ নামে ও আত্মীয় স্বজনের নামে একাধিক প্লটের মালিক হন। এবিষযে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি করায় দুদকে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দুদক এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদে থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষা ক্যাডারের শতশত কর্মকর্তাকে হয়রানি করে চলেছেন।
শিক্ষা ক্যাডারের সবচেয়ে বিতর্কিত কর্মকর্তা সমিতির সাবেক মহাসচিব ও পরিচালক (প্রশাসন) শহিদুল খবির চৌধরীর সঙ্গে ছিল তার বিশেষ সখ্যতা। ফলে তার প্রতিহিংসা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বসান্ত হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। শিক্ষা ক্যাডারের সৎ, মেধাবী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দণ্ডারোপের ভয় দেখিয়ে উৎকোচ গ্রহণ করেন তিনি । কোন কোন নির্দোষ কর্মকর্তাকে দণ্ড দিয়ে অমানুষিক হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন তিনি। যেমনটি তিনি করেছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক পদে দায়িত্বপালন কালে।
গত এক বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন ও শৃঙ্খলা শাখায় অনুসন্ধান করে জানা যায়, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোকবুল হোসেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আমির হোসেন মোল্লা, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবীর মজুমদার, বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শাজাহান আলী সহ আরো কর্মকর্তার নামে মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ গঠন করে তিনি নিজেই তদন্ত করে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে নিজেই নথিতে দণ্ডের সুপারিশ করেন। এই বিষয়ে জানা যায় তিনি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আইন ও শৃঙ্খলা শাখার অতিরিক্ত সচিব পদে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন যুগ্ম সচিব।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশকিছু অতিরিক্ত সচিব কর্মরত থাকলেও কেন তাকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে- এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন পর্যায় থেকে সদুত্তর পাওয়া যায় নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তিনি একটি গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন এখানে রয়েছেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নেপত্থ্যে ভারতীয় ঠিকাদারদের সাথে গোপন চুক্তি বাস্তবায়নে তিনি কাজ করেন। এনসিটিবির বই মুদ্রণ, কারিকুলাম বিকৃতির নেপথ্যে এক ধরণের হিন্দুত্যবাদী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার গোপন এজেণ্ডা বাস্তবায়নে তাঁর রয়েছে সক্রিয় ভূমিকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পসমুহের কাজ শুরুর পুর্বেই আশি ভাগ অর্থ ব্যয় হয়ে যায় তারই তৎপরতায়। এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রচারিত হলওে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয় নি।
অনুসন্ধান থেকে আরো জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতিবাজদের সাথে সরাসরি যুক্ত যুগ্ম সচিব মুখেশ বিশ্চাস ও তার স্ত্রী বিউটি বিশ্বাস। নগদ অর্থ ও স্বর্ণাঙ্কার সহ ডলার ও রূপীতে তিনি উৎকোচ গ্রহণ করেন।
বিশেষ সূত্র থেকে জানা যায়, স্ত্রী বিউটি বিশ্বাসের নামে কোলকাতার সল্ট লেকে এবং দুই কন্যার নামে কানাডায় বাড়ি ক্রয় করেছেন মুকেশ বিশ্বাস। নামে বেনামে রয়েছে আয় বহির্ভূত বিশাল সম্পদ।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে পরিবারের সকল সদস্যের আছে নাগরিকত্ব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়- দূর্নীতিতে আকষ্ঠ নিমজ্জিত একজন অসৎ কর্মকর্তা কিভাবে একই মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ নয় বছর কর্মরত থাকেন। এটাই আশ্চর্যের বিষয়। তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, লোভ ও প্রতিহিংসার কারণে শত-শত কর্মকর্তা- ও.এস.ডি অবস্থায় অবসরে গেছেন। যা শিক্ষা মন্ত্রণালযের দু:শাসনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ বিষযে তাঁর বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায় নি।
Leave a Reply