প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ১০:৪৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৬, ২০২৪, ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ
জনহিতৈষী হাসিব পান্না
মানুষ নশ্বর। "জন্মিলে মরিতে হইবে"। এই আদি অকৃত্রিম প্রবাদটি জানার এবং প্রতি পদে পদে তার প্রমাণ মেলার পরও জীবনকে দীর্ঘস্থায়ী করবার প্রচেষ্টা অধিকাংশ মানুষের। জীবনের কোনো এক ক্রান্তিলগ্নে উপার্জিত সকল অর্থ ব্যয় করে জীবনের স্থায়ীত্ব কিঞ্চিৎ বৃদ্ধির জন্য মানুষের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি আমরা। এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। অভাব অনটনের কষাঘাতে এমনকি বিলাসব্যসনে থেকেও মৃত্যুদূতকে দূয়ারে কড়া নাড়াবার তাগাদা দিচ্ছে আরেকটি শ্রেনী। কিন্তু তাঁর একক চরিত্র নিয়ে তো এই পরিবার, সমাজ, দেশ বা রাষ্ট্র নয়। কেননা সেটি হলে তো ধ্বংস হয়ে যেতোনা সেই সিআইডি ইন্সপেক্টরের পরিবার। যাঁর মেয়ে মাদকের নীল দংশনের প্রতিক্রিয়ায় দংশন (হত্যা) করেছে তার বাবা-মা'কে। প্রায়শই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সন্তানের হাতে বাবা-মা, স্বামীর হাতে স্ত্রী আর পথচারী খুন হচ্ছে ছিনতাইকারী বখাটেদের ছুরিকাঘাতে। এমনকি সমাজের অভিজাত শ্রেণিও ছোবল থেকে পাইনি রক্ষা। আর অধিকাংশ অনুসন্ধানে বের হয়ে আসছে মাদকের নীল দংশনের বিষয়টি। সরকারের পর সরকার এসেছে। মাদকের বিষাক্ত নীল দংশনের সুঁচালো দাত ভেঙে ফেলার জন্য একটার পর একটা কৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু সবই যেন গেছে বিফলে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি মানব জীবন রক্ষার চেয়ে মানব জীবননাশেই অধিক কার্যকর। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিয়োগান্তক পরিণতি ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আমেরিকার বিজ্ঞান প্রযুক্তির পরীক্ষামুলক গবেষণা। পারমানবিক বোমা লিটলবয় আর ফ্যাটম্যানের সাফল্যের স্বীকৃতি নিমিষেই লক্ষ মানুষের প্রাণপ্রদীপ নির্বাপিত করার মাধ্যমে। আর বর্তমানের বিজ্ঞান প্রযুক্তি মানব জীবননাশে তার সক্ষমতা বাড়িয়েছে সহস্র গুণ। পক্ষান্তরে এই একবিংশ শতাব্দীতে নাম না জানা কতো মরণব্যাধির ছোবল হতে রক্ষার জন্য বিজ্ঞান ব্যর্থ হলেও এই বিশ্বের বিজ্ঞানীদের ব্যর্থতার গ্লানি স্পর্শ করে কিনা তা সন্দেহ! তবে নিঃশব্দচারী মৃত্যুর আস্বাদ মাদকদ্রব্য
আবিস্কারের আনন্দে মত্ত মাফিয়া আর কোচানোচোস্ট্রার দোপায়া হিংস্র শ্বাপদকূল। নিঃশব্দে মৃত্যুর দিকে আশরাফুল মাখলুকাতদের ঠেলে দিয়ে এভারেস্ট শৃঙ্গ ছাড়িয়ে গড়ে চলেছে অর্থের পাহাড়। বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিচ্ছে মাদকের বিষাক্ত নিঃশ্বাস। যার প্রতিফলনে উন্নত বিশ্বে কিশোর তরুণ যুবকেরা মাদকে উন্মত্ত হয়ে অকারণে যত্রতত্র গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তবে এই মাফিয়া কোচানোচোস্ট্রার দোপায়া হিংস্র শ্বাপদগুলো মূল টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। যার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। কোন অজ্ঞাত কারণে বিগত সরকারদের আমলে দায়িত্বে নিয়োজিতরা মাদকের ভিসাবিহীন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হতো তা বোধগম্য নয়। পুলিশের সিআইডি হেডকোয়ার্টারের একজন ইন্সপেক্টর সস্ত্রীক মাদকাসক্ত নিজ সন্তানের হাতে নিহত হলেন তা নিশ্চয়ই এদেশের মানুষ ভোলেনি। এই মাদক সাধারণ জনগণের পকেটে পুড়ে দিয়ে অর্থ আদায় বা অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের অপচেষ্টার ঘৃণ্য বিষয়টি মিডিয়া সৈনিকদের মাধ্যমে প্রচারের
ঘটনাও দেশবাসী নিশ্চয়ই বিস্মৃত হয়নি। বিগত দিনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলে নির্ভয়ে মাদকসেবন করলেও প্রভোস্ট বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভয়ে তাদের কিছু বলেনি। পাছে তাদের প্রমোশন আটকানোর পাশাপাশি চাকরিটা না খোয়াতে হয়। এই বীভৎস পরিস্থিতির নেপথ্যের বিষয়টি নতুন করে উল্লেখ করা ভাঙা রেকর্ডসম। মোদ্দা কথা - সকল প্রকার প্রচেষ্টাকে পদদলিত করে মাদকের যেন জয়জয়কার। কিন্তু এভাবে পরাজয়বরণ হলে বিধাতার সৃষ্টি এই আশরাফুল মাখলুকাত কেন এই ধরিত্রীতে? উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে এভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নৃত্যশিল্পের কর্ণধার খ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নৃত্যগুরু ও সমাজবিজ্ঞানী হাসিব পান্না। মাদক সংহারে তাঁর পরিকল্পনা ও কথার রেশ ধরে সঙ্গতকারণেই বলতে হয়- বিজ্ঞানের আরেকটি শাখা সমাজ থেকে মাদকের মূলোৎপাটন করবার জন্য নেমেছে রণে। এই বিজ্ঞানের অধ্যয়ন করে জ্ঞানের ভান্ডার স্ফীত করে সমাজের উন্নয়নে যাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন, তাঁদের বলা হয় সমাজবিজ্ঞানী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করে মোটা অংকের বেতন পাওয়াটা প্রকৃত সমাজবিজ্ঞানীর পরিচয় বহন করেনা। হাসিব পান্না সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের চেয়ে নৃত্য অধিক কার্যকর বলে দেশে বিদেশে তার বক্তব্যে অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মাদকের ছোবলে নিজ দেশ এবং সমাজকে নিঃশেষ হওয়া থেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে তিনি অগ্রসরমান। তিনিও বিশববিদ্যালয় হতে সমাজবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি কাউন্সিলিং- এর মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন। পরিকল্পনা মাফিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকেও কিছুটা অগ্রসর হয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক সংকুলান ও প্রয়োজনীয় চরিত্রের জন্য অভিনয় শিল্পী / প্রকৃত আসক্তের সম্মতি বা সন্ধান না পাওয়ায় বা রাজি না হওয়ায় ভিডিও ধারণও স্থগিত রয়েছে দীর্ঘদিন। আশা আছে অদূর ভবিষ্যতে সম্পন্ন করবেন প্রয়োজনীয় পেলে। যদিও এই ভিডিও ধারণের বিষয়টি নিয়ে জনহিতৈষী হাসিব পান্না'কে নানাবিধ বিড়ম্বনা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে অত্যন্ত মনক্ষুন্ন হয়ে তিনি জানান যে, পার্লামেন্টের অত্যন্ত সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত কোনো Honorable Parliamentarian যদি মাদক ব্যবসার দেশীয় ডিলার হন, এরচেয়ে অভাগা (সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ) আর কেই-বা হতে পারে! সেই রেশ ধরে বিগত সরকারের এক মন্ত্রী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাদকাসক্ত বলার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিলেন। অবশ্য তার পুরস্কার কপালে নির্ঘাত। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজবিজ্ঞানী হাসিব পান্না'র আহ্বান - রাষ্ট্র সংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রাধান্য দিন "মাদকমুক্ত বাংলাদেশ "।
© 2024 Probashtime