প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে দেশের সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। এরপর যেসব শিক্ষার্থীরা মেসে থাকেন তাদের অধিকাংশই মেস ছেড়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়। করোনার শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেস ও বাসা ভাড়া।
সংকটের এই মুহূর্তে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ৭ শিক্ষার্থীর সাথে ঘটেছে শ্বাসরূদ্ধকর এক ঘটনা। গ্রাম থেকে শহরে বাসা ভাড়া দিতে আসলে সবাইকে রুমে আটকে রেখে ফোন, মানিব্যাগ সব বাসার মালিক ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্রতিবেদককে জানায়, ‘মালিক প্রায়ই আমাদেরকে ফোন করতো ভাড়ার জন্য। কিছুদিন আগে ফোন করে জানায় অর্ধেক ভাড়া নিবে। তাই এ মাসের ১০ তারিখে আমরা সবাই মিলে একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করি আর টাকা ২০ হাজার নিয়া ঢাকা যায়। আমরা টাকা দিবো আর জিনিসপত্র দিয়ে বাসা ছেড়ে দেবো। কিন্তু আমরা গেছি আর মালিক আমারকে রুমে আটকায় দিলো। আমাদের হাতের মোবাইল নিয়া যায়, টাকা নেয়, আমাদেরকে মারধর এর হুমকি দেয়, আমাদের সাথের একজনের গায়ে হাত দেয়। কোনো প্রতিবাদ করার সুযোগ না দিয়েই আমাদের সাথে থাকা ২০ হাজার টাকাও নিয়ে যায়।’
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘টাকা নিয়ে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তারপর তিনি অর্ধেক ভাড়ার কথা বাদ রেখে বলেন পুরো টাকা সহ সবার এডভান্স দিতে হবে। নয়তো ছাড়া যাবে না কাউকে। ভাড়াটে প্রাইভেট কারটিও আটকায় রাখে বাসার মালিক। তখন নিরুপায় হয়ে আমরা ধানমন্ডি এক ভাইয়ের কাছে সব খুলে বলি এবং ৫০ হাজার টাকা দিলে আমাদেরকে ছেড়ে দেয়।’
মেসের বর্ডারদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন বা খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালান। আবার অনেকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারও চালান। কিন্তু করোনা মহামারিতে এসব শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা মেসের ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। তবে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়ে শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন অনেক শিক্ষার্থীও।
এছাড়া, কলেজের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীও ভাড়া বাসা নিয়ে ভোগাত্তির কথা বলেছে। তিনি জানান, ‘এই করোনা পরিস্থিতিতেও ঢাকায় এনে ছেড়েছে! ক্যাম্পাস বন্ধের পর দুমাস বাড়িয়ালার বাসায় থাকিনি।কিন্তু বাড়িয়ালা পুরো দু’ মাসের ভাড়া নিয়েছে। অনেক বলে কয়েও কাজ হয়নি। অস্বচ্ছল পরিবার হওয়াতে সুদে ধার করে মেস ভাড়া পরিশোধ করেছি। যা আমার জন্য চরম কষ্ট ও হতাশার।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ নাসির বলেন, ‘এমন কোনো খবর এখনো শুনতে পাইনি। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তাদের সহযোগীতা করা হবে।’
এদিকে, মহাখালীর লিজা বেকারির সামনের গলির এই বাসার মালিক সকিনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
Leave a Reply