তখন গভীর রাত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জোনাকি পোকার মতো জ্বলছে কয়েকটি মোবাইলের টর্চ লাইট। হালকা আলোয় বসে কাজ করছে এক দল তরুণ। সারাদিনের কর্মব্যস্থতায় এখন অনেকেই ক্লান্ত। তবুও কাজ করতে হবে। ভাল রাখতে হবে অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোকে। তরুণরা কখনও বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন, কখনও খাবার প্যাকেট করছেন, আবার কখনও কাদে করে অসহায় মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন উপহার সামগ্রী।
শুধু খাবার নয়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষর্থীদের আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সহায়তা করছেন দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সেবায়। অংশ গ্রহণ করছেন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে। ভূমিকা রাখছেন প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ও দুর্যোগ মোকাবেলায়। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। বিতরণ করেছেন লিফলেট, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার। শিক্ষার্থীদের প্রেরণা বৃদ্ধিতে বৃত্তিও দিচ্ছেন তরুণরা। তরুণদের এমন কার্যক্রম গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায়।
প্রায় ৭ মাস আগে চলো এগিয়ে যাই মানবতার সেবায় স্নোগানে ৮০ জন তরুণকে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তারুণ্যের আলো সামাজিক সংঘের। উদ্দেশ্য ও লক্ষ সমাজের অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা ও সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়মূলক কজ করা। এই সংগঠনের ব্যানারে এখন কাজ করছেন প্রায় পাঁচশতাধিক তরুণ। তাদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরিজীবী আবার কেউ ব্যবসায়ী। মানুষের পাশাপাশি নিজেরাও দিচ্ছেন অর্থ।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করছেন। গত কয়েক মাসে প্রথম বার ৬৫ জন, দ্বিতীয় বার ১৩০ জন, তৃতীয় বার ১৮৮ জন ও চতুর্থ বার ১৬৬ জনসহ চার ধাপে ছায়শতাধিক হতদরিদ্র মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন উপহার সামগ্রী। এ সহযোগিতা করা হয়েছে। তার মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, আলু, পেলার চাল, চিনি, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, সাবান, লবণ, জিরা, গরম মসলা, প্যাকেট দুধ, সেমাই ও নগদ অর্থ। এসব খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছেছে কাপাসিয়া উপজেলার বানার হাওলা, রাউৎকোনা, দস্যু নারায়নপুর, তরগাঁও, রাণীগঞ্জ, নারায়নপুর, বড়টেকসহ বিভিন্ন এলাকায়। ঈদুল ফিতরে আর্থিক সহযোগিতা করছেন ৮টি মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমকে। পরিবেশ রক্ষায় করেছেন বৃক্ষ রোপণ। সংস্কার করেছেন স্থানীয় একটি সড়ক।
তরুণদের কাজ করার সময় সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষকে সহযোগিতার জন্য বসে ফান্ড কালেক্ট করছেন জামশেদ, এনামুল ও মোজাম্মেল। তাদের সহযোগিতা করছেন রানা, সাকিব ও আসিফ। খাবার প্যাকেট করছেন শরিফ কামাল, নাঈম হাসান। মানুষের ঘরে প্যাকেট করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন নাজিবুল ও ফয়সাল। কাজের তদারকি করছেন সংগঠনের উপদেষ্টা আশরাফ আলী ও সাইফুল ইসলাম। শুধু এ কয়েকজনই নয়, সংগঠনের ব্যানারে কাজ করছেন কয়েক ’শ’ তরুণ। প্রতিটি খাবারের প্যাকেটে রয়েছে তাদের সংগঠনের নিজেস্ব স্টিকার । নেই কোন ফটোসেশন। তারা বলছেন, ফটোসেশন করলে মানুষ সাহায্য নিতে বিব্রতবোধ করবে। এক ঘরে সহযোগিতা পেলে অন্য ঘর জানে না। এমন ভাবেই পৌঁছে দিচ্ছে খাবার।
তারুণ্যের আলো সামাজিক সংঘের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রস্তাবিত সভাপতি মাহমুদুল হাসান নাঈম বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে বদ্ধপরিকর। বর্তমান উদীয়মান যোদ্ধা তারুণ্যের আলো সামাজিক সংঘের সকল সদস্যরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। সকলে যদি আমাদের পাশে থাকে তবে আমরা এগিয়ে যাব উদ্দাম গতিতে, হাসি ফুটাবো সমাজের মুখে।
Leave a Reply