মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আয়োজন ঈদ উৎসব। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষ এই উৎসবে শামিল হয়। সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যে যার সাধ্যমতো খুশিতে মেতে ওঠে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উৎসব দুটির পেছনেই রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণমুখী কাজ ও ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা।
১.গতবছর ইদের দিন সকালে বাবার সাথে ইদগাহে নামাজ পড়তে যাবার সময় বাবাকে দেয়া পাঞ্জাবি-পাজামা পরে বলে তোর পছন্দ তো সুন্দর! এইটা বোধহয় আমার শোনা পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর বাক্য। কোন বাক্য এ অনূভুতি প্রকাশ সম্ভব না।
২.ক্যাম্পাস কবে বন্ধ হবে তা নিয়ে চিন্তা না থাকলেও আসল দুঃশ্চিন্তা টিউশনের বেতন টা কবে দিবে, আদৌ বোনাস পাবো কিনা, বোনাসের হিসেব পড়ে থাক সময়মতো বেতনটা পাইলেই হয়। বেতনটা দিতে দিতেই একদম ইদের আগের মূহুর্তে। না এখন আর দেরী করলে চলবে না, দ্রুত টিউশনের বাসা ত্যাগ করে একটা রিকশা, পায়ে হেঁটে আশেপাশের মার্কেট থেকে বাবা, মায়ের জন্য ইদের কাপড় কিনে মেসে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা। বোনাস দিলে হয়ত ভাই-বোনের কিংবা পরিবারের সবার জন্য নিতে পারতাম এমন আফসোস করে যেটুকু সাধ্যে পেরেছি সেটুকু করেছি সেটা ভেবে তৃপ্তির হাসি।
৩.গতবারের মত এবার ইদে অনেক না পাওয়ার ভীড়ে একটা জিনিস পেয়েছি সেটা হল অনেকদিন ধরে পরিবারের পাশে থাকা,আর যেটা পেয়েছি পাঁচ মাসে, বাবা তোমাকে বাজার করতে হবে না, আমি যাচ্ছি। আম্মা রান্না করতে যাচ্ছো? আমিও আসি, সাহায্য করি। বাবার একা কাজে হাপিঁয়ে যাচ্ছে, আমি আছি তো, সাহায্য করি। এবার আর সময়ের বাঁধনে আবদ্ধ থেকে কবে যাবো এই ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হয়নি বরঞ্চ পরিবারের নিখাঁদ অফুরান ভালোবাসার শ্বাস নেয়া যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোও এখন সোনালী অতীত।
৪.ছোটবেলার সবাই মিলে চাঁদ দেখা,সালামিতে চকচকে নোট, সালামি জমিয়ে কিছু কেনা, মেলায় লটারী, ইদের আগের দিন বড় আপুর কাছে গিয়ে হাতে মেহেদি লাগানো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা আর একটু বড় হয়ে প্রিয়জনের একটা ইদের ক্ষুদে বার্তার জন্য অপেক্ষা, ইদের দিন রাতের শোতে সিনেমা দেখা । ইদের আগে নানাবাড়িতে গিয়ে নতুন পোশাক আনা।সবকিছুই এখন মিস করি।
ইস! যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো আর ওই সময়গুলো বারবার ফিরে পেতে পারতাম।
করোনার জন্য বছরের দুইটি ইদ একসাথে কাটানোর সাথে চিন্তাভাবনাহীন সবার ভালোবাসা গ্রহণ সেটাই বা কম কিসে, কে জানে অদূর ভবিষ্যতে কর্মস্থলে থাকার কারনে বাড়িতে না আসায় এমন দুটি ইদ ভীষণভাবে মিস করব।
সময় আমাদের অনেক কিছু পরিবর্তন করে দিলেও ফেলে আসা ইদের স্মৃতি সবসময়ই সুখের হয়। শৈশবে, কৈশোরের ইদের মুহূর্তের সবকিছু এখন চাইলেও পাওয়া যাবে না। সেগুলো অতীত। তবুও ফিরে পেতে না পারলেও হারিয়ে যেতে চাই কল্পনায় সঙ্গী করে সেই মূহুর্ত।
শামিম মিয়া
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
১২ তম আবর্তন।
Leave a Reply