জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শহীদ শিশু শেখ রাসেল রাসেলের জন্মদিনে রইল অফুরন্ত দোয়া, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা !
১৯৬৪ সালের ১৮ই ,অক্টোবর ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে শিশু রাসেল যখন জন্মগ্রহণ করে তখনকার পরিস্থিতি ছিল রীতিমত উত্তেজনক। ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঘটনাগুলো পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। একদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল আবার অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী কায়দে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। যখন কঠিন অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের মাঝেও এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছেন, ঠিক তখনই মুজিব-ফজিলাতুন নেছার ঘর আলোকিত করে জন্ম নিল এক ছোট্ট শিশু যার নাম রাখা হয় ‘রাসেল’।
সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিলো রাসেল।’
আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের একুশ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’
ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবার একটি বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন একজন আদর্শ মাতা। তিনি তার সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় মানুষ করেছেন, দিয়েছেন মানবিক গুণাবলিও। ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনার মাঝে অনুরূপ গুণাবলি প্রতীয়মান। তিনি তার সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা আর মানবিক গুণাবলি দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল)কে গড়ে তুলেছেন তাদের সুখ্যাতি আজ বিশ্বব্যাপী মানুষের মুখে মুখে। শিশু রাসেল বেঁচে থাকলে আজকের মানুষটিও হতেন এক অন্যন্য গুণাবলির ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত যায়নি, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। আর তাদের ওই ঘৃণ্য অপচেষ্টা যে শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে- এটি আজ প্রমাণিত।
শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধিবোধ সম্পন্ন মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম থেকে শহর ,বাংলাদেশের তথা বিশ্বব্যাপী প্রতিটি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক এবং সরকার শেখ রাসেলের ১১ বছরের জীবনগল্পের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শিশুপুত্র শেখ রাসেলের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিরা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পলাতক আছে। সেই সকল দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা আজ সময়ের দাবি।
শহীদ শিশু শেখ রাসেলের রক্তের ইজ্জত রক্ষা করতে আসুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাহলেই জাতির পিতার সোনালী স্বপ্ন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।
এই নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রমী মানবতার জননী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শতআয়ু কামনা করে আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া করছি এবং স্বাধীনতাযুদ্ধ সহ দেশ, দল ও রাষ্ট্রের জন্য সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক !!!
– লেখক:
জার্মানি প্রবাসী
এফ এম এইচ আলী
জার্মানি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী
ও জার্মান বাংলা বঙ্গবন্ধু রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি।
Leave a Reply