পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার প্রচলিত প্রথা প্রচলন ঘটিয়েছে নব্বই দশকে এসে। পশ্চিমারা ইসলামকে জঙ্গিবাদ ট্যাগ লাগিয়ে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে এবং বিশ্বের অমুসলিমদের ভিতর ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে সেটাও নব্বই দশকে এসে। যা ক্রমেই তারা বিশ্বের কাছে জোরালো ভাবে বিস্তার করে চলছে।
নব্বই দশকের পূর্বে ইসলামিস্ট দেশ ও ধর্ম নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তেমন একটা মাথা ব্যাথা ছিল না, যতটা নব্বইয়ের পর হতে শুরু হয়েছে এর অন্তরালে রয়েছে শক্তিশালী বৈশ্বিক রাজনীতি এবং বৈশ্বিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ শক্তি।
এখন প্রশ্ন হলো পশ্চিমা দেশগুলো তাহলে ইসলাম ধর্মকেই কেন বেছে নিলো এবং ধর্ম নিয়ে কটুক্তিতে কেমন রাজনীতি জড়িত?
১৯৭৯ সালে আমেরিকার সহায়তায় ও মদদে আফগানিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। আফগানদের যুদ্ধকে আমেরিকা তখন বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছিলো এভাবে যে ইসলামি পন্থীরা ইসলামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ‘জেহাদ’ করছে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে।
সাথে যুদ্ধকালীন অবস্থায় আফগানিস্তানে আমেরিকা উত্থান ঘটায় ‘তালেবান’ ও ‘আল কায়দা’ নামক সংগঠন যেটাকে আমেরিকা ‘জেহাদি’ সংগঠন বলে অভিহিত করেছিল এবং ইসলামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা জেহাদ করবে এই মতাদর্শ তুলে ধরেছিলো।
কিন্তু সমস্থ সমীকরণ উল্টে যায় ১৯৯১ সাল হতে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে গড়ে উঠলো ১১ আলাদা স্টেট এবং মধ্যপ্রাচ্য পরিণত হলো ইসলামিক স্টেট এ। তখন মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠলো বিশ্বের পরাশক্তির বিষফোঁড়া।
ভূরাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, বৈদেশিক যোগাযোগ, সমুদ্র পথে যোগাযো, সমুদ্র শাসন, খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনৈতিক,কূটনৈতিক, সামরিক শক্তি এবং বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হলো ইসলামিস্ট মধ্যপ্রাচ্য। মূল কথা মধ্যপ্রাচ্যে যে রাষ্ট্রগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে সেই রাষ্ট্র গুলোই বিশ্ব পরাশক্তিতে পরিণত হবে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে মধ্যেপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে এটা পরিষ্কার বুঝা যায়।
এই ১৯৯১ সালের পর হতে মধ্যপ্রাচ্যের উপর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো কঠিন ভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা শুরু করে এবং প্রধান হাতিয়ার হিসাবে বেছে নেয় – ধর্ম ইসলাম। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ইসলামিক স্টেট।
এরপরেই পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বিশ্ব মহলের কাছে ইসলাম কে জঙ্গি গোষ্ঠী বলে জোড়ালো প্রচার চালাতে শুরু করে। ইসলাম কে জঙ্গিবাদ আখ্যায়িত করার বরাত দিয়ে,
-তালেবান
-আল-কায়দা
-আই এস
সংগঠন গুলো কে দায়ী করত শুরু করে যে এগুলো ইসলামি জঙ্গি সংগঠন।
সাথে অমুসলিম সম্প্রদায়গুলোর ভিতর ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি ছিড়িয়ে দিতে শুরু করে যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জঙ্গিবাদি,-উগ্রবাদী এক কথায় Terrorist। মাথায় টুপি মুখে দাড়ি মানেই Terrorist এমন ধারণা বিস্তার করতে শুরু করলো।
কিন্তু উত্থানের সময় সংগঠন গুলোকে পশ্চিমারাই ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ‘জেহাদি’ দল বলে প্রচার করেছিল এবং সংগঠনগুলোর সৃষ্টিকর্তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেই পশ্চিমা রাষ্ট্রই ছিলো।
এবং কয়েক বছর পরপর ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিশেষ করে রাসূল(সাঃ) নিয়ে পশ্চিমারা ব্যঙ্গ ও কটুক্তি করতে শুরু করে ফলস্বরূপ পুরো মুসলিম বিশ্ব তাদের পশ্চিমাদের অপকর্মের সুষ্ঠু প্রতিবাদ গড়ে তুলে, ঠিক তখনই মুসলিমদের এ প্রতিবাদকে বিশ্বের কাছে উগ্রবাদ বলে অভিহিত করে তুলে ধরে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এর ফলে পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক স্টেটের সাথে আগবাড়িয়ে একটা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে এবং তাদের আখ্যা দেওয়া ভিত্তিহীন জঙ্গি দমন ছুতো দেখিয়ে যুদ্ধ বাঁধায়, ধ্বংসলীলা আর জেনোসাইড চালিয়ে পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাদের আগ্রাসনে ধ্বংসের স্বাক্ষী আফগানিস্তান, ইরাক, তুরষ্ক সহ প্রায় অধিকাংশ ইসলামিস্ট দেশ।
পশ্চিমাদের সেই ধারাবাহিক ধর্মীয় নোংরা রাজনীতি এখনো প্রবাহমান এবং ইসলামকে অভিহিত করা ভিত্তিহীন জঙ্গিবাদ এখনো প্রচার করে চাচ্ছে এবং বৃহৎ পরিসরের জনগোষ্ঠীর ভিতর ইসলামোফোবিয়া ঢুকিয়ে দিতে সক্ষমও হয়েছে।
ইসলামি জঙ্গিবাদ ধারণাটি পশ্চিমারা সৃষ্টি করেছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা। হামলা হওয়ার সাথে সাথে পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্ব মহলের কাছে ‘জঙ্গি’ হামলা বলে অভিহিত করে প্রচার করলো এবং ইসলামি মৌলবাদীদের উপর দায় চাপালো।কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তের ফলে সত্যতা সামনে আসলো যে হামলার সাথে ইসলাম পন্থিদের কোন সম্পর্ক নেই হামলাকারীরা অমুসলিম তখন এটাকে নেহায়েত ‘সন্ত্রাসী’ হামলা বলে অভিহিত করলো।
মানে ইসলাম জড়িত থাকলেই জঙ্গিবাদ; আর এই পন্থা অনুসরণ করেই পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইসলামোফোবিয়া ছড়াচ্ছে পুরো বিশ্বে। টুপি-পাঞ্জাবি-দাড়ি মানেই জঙ্গি এই ধারণাই মানুষের মাঝে ছড়ি দিচ্ছে প্রকট ভাবে।
তারপর গত কয়েক বছরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং রাসূলে(সাঃ) কে নিয়ে ব্যাঙ্গ করায় যাদের হত্যা করছে সেই অভিযুক্ত মুসলিম হত্যাকারী ব্যাক্তির কোন স্বীকারোক্তি না নিয়েই সাথে সাথেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছ। প্রত্যেকটি ঘটানতেই অভিযুক্তদের কোন স্বীকারোক্তি দেওয়ার সুযোগই দেওয়া হয়নি। এটা একটা জটিল প্রশ্ন দাঁড় করায়!
তাছাড়াও পশ্চিমা কোন রাষ্ট্র যে সময়ে ইসলাম ধর্ম নিয়ে এমন কটূক্তি এবং ব্যাঙ্গ করে, ঐ রাষ্ট্রের সেই সময়ের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় –
১. রাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে
২.রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল ও নিম্নগামী এমন হলে
৩. রাষ্ট্রের চলমান প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলে
৪. রাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেলে
যখনি পশ্চিমা কোন দেশ এমন ঘটনার সূত্রপাত ঘটছে প্রত্যেকবার উক্ত রাষ্ট্রের এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে।
মূল কথা হলো বিশ্বের কাছে ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলামিক টেররিজম ধারণাটা প্রতিষ্ঠা করে রাখতে পারলেই পশ্চিমা দেশগুলো ফায়দা লুটতে পারবে এবং বিশ্বের পরাশক্তি হিসাবে মাথা জাগিয় বিশ্ব শাসন ও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
সর্বশেষ বিবেচ্য যে ফ্যাসিস্ট রাজনীতি, আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদের জাতাঁকলে পিষ্ট ইসলাম। এমন নোংরা বিশ্ব রাজনীতি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায়। ফলস্বরূপ বিশ্ব হয়ে উঠছে বিশৃঙ্খল ও বিভক্ত যার শেষ পরিণতি হবে যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়া।
__মোঃ সানোয়ার হোসেন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৮.১০.২০২০ ইং
Leave a Reply