মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা নিয়ে পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ‘ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদি খালিফা’ অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব- এ ঐশী ঘোষণার সফল পরিণতি হলো পৃথিবীতে মানুষের সৃজন ও প্রেরণ। খোদার প্রতিনিধি মানুষকে সৃষ্টির পর তাকে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য নেয়ামত। মহান আল্লাহর বাণী- ‘ওয়া ইন তাউদ্দু নেয়মাতাল্লাহি লাতুহসুহা’ অর্থাৎ আর যদি তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতগুলোকে গণনা করতে থাকো তবে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না। যেসব কারণে মেহেরবান প্রভু কর্তৃক বান্দার ওপর প্রদেয় নেয়ামত তথা অনুগ্রহ আরও বহুগুণে বেড়ে যায়, মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা তন্মধ্যে অন্যতম। রমজানুল মোবারকের প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান, ইবাদত-পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধানের আলাদা আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। সেহরি, তারাবি, ইফতারসহ অন্য সব কর্ম সম্পন্নের জন্য প্রণোদনামূলক বিশেষ ফায়দা হাসিলের বর্ণনা রয়েছে। পবিত্র রমজানের এসব আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো এতেকাফ পালন।
এতেকাফ শব্দের অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা, সংযুক্ত থাকা বা বসবাস করা। পারিভাষিক অর্থে মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্তে ও তার সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগি, তসবি-তাহলিল, জিকির-আজকার ও অন্যান্য ধর্মীয় কর্ম সম্পাদন করাই হলো এতেকাফ। ইসলামে এতেকাফের ব্যাপক ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর বাণী মতে- ‘যে ব্যক্তি প্রভুর সন্তুষ্টি বিধানে নিষ্ঠার সঙ্গে একদিন এতেকাফ পালন করবে, আল্লাহপাক জাহান্নামকে তার থেকে তিন খন্দক (এক খন্দকের দূরত্ব ভূমণ্ডল থেকে নভোমণ্ডলের চেয়েও বেশি) দূরে সরিয়ে দেবেন।’ হাদিসে আরও রয়েছে, এতেকাফরত ব্যক্তি সব ধরনের গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার আমলনামায় এত বেশি পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সব ধরনের পুণ্য কাজই সে সম্পন্ন করেছে।
এতেকাফের কথা আমরা পবিত্র কোরআনে বিবৃত মহান আল্লাহর বাণীতে এভাবে দেখতে পাই- ‘ওয়ালা তুবাশিরু হুন্না ওয়া আন্তুম আকিফুনা ফিল মাসাজিদ’ অর্থাৎ তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যখন তোমরা মসজিদে এতেকাফ অবস্থায় থাকো। রাসুল (সা.) ও তার সাহাবায়ে কেরাম এতেকাফের বিধান পালন করেছেন- যা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র রমজানে শবেকদরকে তালাশ করতে গিয়ে মহানবী (সা.) এর প্রথম দশকে এতেকাফ করেছেন, অতঃপর দ্বিতীয় দশকেও এতেকাফ করেছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঐশী নির্দেশনার আলোকে তিনি জানতে পেরেছেন সেই মহিমান্বিত রজনী তথা শবেকদর রমজানের শেষ দশকে; তারপর প্রিয় নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকেও এতেকাফের হালতে কাটিয়েছেন। বুখারি শরিফের ভাষ্যমতে, রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তার পত্নীরাও এতেকাফ পালন করেছেন।
জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, এমন মসজিদ এতেকাফের জন্য উত্তম। অবশ্য শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যে মসজিদে আদায় করা হয় সেখানেও এতেকাফ করা যাবে। পুরুষরা মসজিদে আর নারীরা বাসভবনে এতেকাফ পালন করবেন। সারাক্ষণ ইবাদতের হালতে থাকা, পার্থিব কোনো বিষয়ে সংশ্নিষ্ট না হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে সারা বছর এতেকাফের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে ধারণ করার মধ্যেই রয়েছে রোজাদারের জন্য প্রকৃত কল্যাণ। আর এতেকাফের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম কদরের মহিমান্বিত রজনীকে তালাশ করা। আল্লাহপাক আমাদের এতেকাফ কবুলের মাধ্যমে পবিত্র শবেকদরকে পাওয়ার ও সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভ করার তৌফিক দান করুন….আমিন|
আব্দুন নূর
লেখক ও সাংবাদিক
Leave a Reply