মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হঠাৎ থমকে গেল এই শহর বলা যায় গোটা বিশ্ব এমনকি প্রাণ প্রিয় চিরচেনা ক্যাম্পাসটা ও। করোনা ভাইরাসের সৌজন্যে চলছে এখন পুরো পৃথিবী। অঘোষিত লক ডাউনে দেশ। সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভয়াল করোনা ভাইরাসের কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাকুরিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ তথা ক্রীড়াঙ্গন এবং সিনেমা জগতের ব্যক্তিত্বরা। সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বন্ধ রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও। লকডাউন হওয়ার ঠিক আগেই অচল হয়ে গিয়েছে গোটা শহর। গৃহবন্দি সকলে। তবে বাসায় থাকা ব্যাপারটা খুব একটা আপত্তি নেই।
হোম কোয়ারেন্টাইন কি?
হোম কোয়ারানটাইনের বাংলা অর্থ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। হোম কোয়ারানটিন মানে বাইরে ঘুরে বেড়িয়ে ফুর্তি করা নয়।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (আইএইচআর -২০০৫)-এর আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, যে সব দেশে নভেল করোনাভাইরাস বা (কোভিড-১৯)-এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে সে সব দেশ থেকে যে সব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশি-বিদেশি যে কোনো নাগরিক), যারা দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাদের কোনো শারীরিক উপসর্গ নেই, তাদের ১৪ দিন কোয়ারানটাইন পালন করা আবশ্যক।
বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা নেই। ক্লাসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেই পড়াশুনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সব কিছু বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারপরও থেমে নেই জীবন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার কাছের মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করে তুলছেন।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লাকি আক্তার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা দিনগুলো নিয়ে অনুভূতি তুলে ধরেছেন প্রতিদিনের সময়ের কাছে।
লাকি আক্তার বলেন, ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়, অনেকদিন শহরের রাস্তায় ছুটে চলা হয় না, ঘরের বাহিরে গিয়ে আকাশ দেখা হয়ে ওঠে না। আমি জানি আমার সহপাঠী ও প্রতিবেশীদের ও মন খারাপ ,অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে এই হোম কোয়ারেন্টাইন সময়টাতে। আমার ও মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ হয় কিন্তু যখনই মনে পড়ে বাইরে গেলে আমার নিজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য বিপদ ডেকে আনবো তখনই বাড়িতে থাকার উৎসাহ খুঁজে পায়।হোম কোয়ারেন্টাইনের এই সময়টাতে আমি মায়ের সাথে হাতেহাতে কাজ করছি,বাবা মায়ের সাথে সুন্দর সময় কাটাচ্ছি ,আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় সালাত আদায় করছি ,কোরআন তিলওয়াত করছি,কয়েকটি সাওম পালনের নিয়ত করেছি। লেখালেখি করতে ভালো লাগে তাই এই সময়টাতে লেখালেখিতে মন দিয়েছি,সংগ্রহে থাকা বইগুলো পড়ছি। প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে ধর্মচর্চা (ইসলামিক বই,নবী রাসূলদের জীবনী ,কোরআন,হাদীস অধ্যয়ন), দেশচর্চা (ভবিষৎ দেশকে কেমন দেখতে চাই, দেশের জন্য কি করেছি , কি করতে চাই, দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে কি করতে হবে এসব নিয়ে অধ্যয়ন) করে আসছি এই সময়টাকে। বাসায় বসে থেকে একটি অনলাইন ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনার ছক একেঁছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে সহপাঠীদের ও আত্মীর-স্বজনের খোঁজ রাখছি।
সবশেষে এটাই বলব পরিবারের সবার সাথে একটি সুন্দর সময় কাটাচ্ছি। হোম কোয়ারেন্টাইন পরিবারের সকল সদস্যদের একত্রে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
Leave a Reply