রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় খাগড়াছড়ি থেকেঃ
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখায় (নো-ম্যানসল্যান্ডে) গত ২রা এপ্রিল থেকে অসহায় অবস্থায় থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শাহনাজ পারভিনকে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।সোমবার (৪ মে) বিকেল ৪ টা সময় রামগড় আনন্দ পাড়াস্থ সীমান্ত এলাকায় হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জি এইচ এম সেলিম হাসান, ৪৩ রামগড় বিজিবি জোন কমান্ডার ল্যাঃ কর্ণেল তারিকুল হাকিম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী,খাগড়াছড়ি ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, ইউনিট অফিসার আবদুল গণি মজুমদার, স্থানীয় সাংবাদিক, পারিবারিক যোগাযোগ পুর্ণস্থাপন কর্মকর্তা মাহবুবুল হকের নিকট সকলের উপস্থিতিতে নারীটিকে হস্তান্তর করেন।
বিজিবি সুত্রে জানা যায়, গত ২রা এপ্রিল সকালে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্ঠা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুশইনের চেষ্ঠা রুখে দেয় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিপদে পড়ে যায় ঐ নারী। পরে প্রায় ১৬দিন ধরে ঐ নারী বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ফেনী নদীর মাঝখানে চরে তথা নোম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশে অবস্থান করছে এবং অমানবিক জীবন যাপন করছে। এনিয়ে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মাঝে তিন দফায় বৈঠক হলেও আসেনি কোন সমাধান। সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত মানসিক ভারসাম্যহীন ঐ নারী নিজ মুখে তার বাড়ী একবার ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম মহকুমা শহরের দোলবাড়ি এলাকায়, আরেকবার হরিণা এলাকায় বলে জানায়। আবার তিনি তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রইখারচর বলে জানায়। মহিলাটির বক্তব্যের ভিত্তিতে বিজিবি-বিএসএফ ঠিকানাগুলো সনাক্ত করার জন্য কাজ শুরু করে। যা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএসের নজরে আসে। বিজিবি-আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস যৌথভাবে কাজ করে নারীটির নাম পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এসময় উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা শাহানাজ পারভিনের (মানসিক ভারসাম্যহীন নারী) বড়ভাই ওমর আলী, ছোট ভাই সাহেব আলী ও সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিক আলী মন্ডল, উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল কাদেরের সাথে কথা বলে, তাদেরকে শাহানাজ পারভিনের ছবি ও ভিডিও পাঠালে তারা তা সনাক্ত করেন এবং প্রায় ২ বছর যাবত তিনি নিখোঁজ আছেন বলে জানান। নাম-পরিচয় নিশ্চিত হবার পর তাকে নোম্যানস ল্যান্ড হতে সরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আনা হয় এবং তা ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের ভাইচ চেয়ারম্যান এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার জানান, বিজিবির আন্তরিকতায় গত দুই বছর ধরে নিখোঁজ থাকা একজন নারীকে আমরা আইসিআরসির রেস্টোরিং ফ্যামিলি লিংকস (আরএফএল) এর মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করেছি।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিপদ-আপদে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস মানুষের জন্য কাজ করে। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগে শাহনাজ পারভিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পর নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় আজ আমরা তাকে গ্রহন করেছি। আশা রাখি কাল বিকেলের মধ্যে তাকে পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
রামগড় ৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন এর জোন কমান্ডার ল্যাঃ কর্ণেল মোঃ তারিকুল হাকিম এ প্রতিনিধিকে বলেন, অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর পরিচয় নিশ্চিত হবার পর আমরা তাকে নোম্যানসল্যান্ড হতে সরিয়ে এনে ভালোভাবে রেখেছি। তিনি বলেন গত ২ বছর ধরে নারীটি দেশে ছিলেন না ভারতে ছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি। তবে বিএসএফ ও ভারতীয় লোকজন তাকে বাংলাদেশী বলেই পুশইনের চেষ্ঠা করেছিলো। ইতিমধ্যে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএসের হাতে নারীটিকে তুলে দিয়েছি এবং আশা করি আগামী কালকের মধ্যে তাকে তার বাবা-মা ও ভাইদের নিকট পৌঁছানো হবে। বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিএসএফকে অবগত করেছি। পুরো বিষয়টিতে সহযোগিতা করার জন্য তিনি আইসিআরসি, বিডিআরসিএস স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
Leave a Reply